জো বাইডেনকে যেভাবে ‘নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছেন’ নেতানিয়াহু
১৯৯৬ সালে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর বিল ক্লিনটন তার এক সহকারীর দিকে ফিরে বলেন, 'এখানে আসলে সুপারপাওয়ার কে?' পরবর্তী চার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কেউই অবশ্য নেতানিয়াহুকে নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করেননি।
অনেক আগেই নেতানিয়াহু যে 'কৌশলগত সুবিধা' তৈরি করেছেন, তার জোরে ওভাল অফিসে যারা বসেছেন তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যার ওপর তিনি কর্তৃত্ব ফলিয়েছেন, তিনি হলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অর্থাৎ, নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম করেছে। বিশেষ করে, বাইডেনের সঙ্গে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর কৌশলগত অবস্থান আরও সুদৃঢ়। এর ফলে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুর ক্ষমতা ও প্রভাব প্রশ্নাতীত হয়ে গেছে। সামরিক বিশ্লেষকরা এই বিষয়টিকে 'আধিপত্য বিস্তার' বলে অভিহিত করেছেন।
বাইডেনের চেয়ে বেশি আর কোনো প্রেসিডেন্টই হয়তো মধ্যপ্রাচ্য সংকট থেকে মুক্তি পেতে চাননি। তবে লেবাননে ইসরায়েলের সর্বশেষ স্থল আগ্রাসন এবং ইরানের সাথে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের শঙ্কা সৃষ্টির পর, বাইডেনই এই অঞ্চলের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যুক্ত হয়ে পড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের সাবেক কূটনীতিক ও বর্তমানে হারেৎজ পত্রিকার কলামিস্ট অ্যালন পিনকাস বলেন, 'বেশিরভাগ মার্কিন রাজনীতিবিদের চেয়ে ওয়াশিংটনের (রাজনৈতিক) খেলায় পারদর্শী নেতানিয়াহু। তিনি বাইডেনকে রীতিমতো নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছেন।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র এক মাস বাকি, এসময় মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে আগামী তা ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের ফলাফলও পাল্টে দিতে পারে।
লেবাননে নিজেদের সবচেয়ে বড় মিত্র হিজবুল্লাহ'র প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলে ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এতে কোনো ইসরায়েলি নিহত না হলেও, ইসরায়েলের বিখ্যাত আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বেশ কয়েকটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত একটি এফ-৩৫ বিমান ঘাঁটির কাছে গিয়ে পড়েছে। এছাড়া, তেল আবিবে অবস্থিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরও অল্পের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বেঁচে গেছে।
গত এপ্রিলে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্সের সময় বাইডেন প্রশাসন প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর ওপর সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে এবার তাদের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে তেলের দাম বাড়তে পারে, যা নির্বাচনের আগে মার্কিন ভোক্তা তথা ভোটারদের হতাশ করবে।
গত বৃহস্পতিবার বাইডেন স্বীকার করেন, ইরানের তেলের খনিতে ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরান অতীতেই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তাদের তেলের খনিতে কোনো ধরনের হামলা করা হলে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের তেল অবকাঠামোতে হামলা করে প্রতিশোধ নেবে। এরই মধ্যে ব্রেন্ট তেলের দাম গত সোমবারে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার থেকে বেড়ে শুক্রবার ৭৮ ডলারে পৌঁছেছে। নতুন করে সংঘর্ষ হলে দাম বেড়ে ১০০ ডলারের কাছাকাছি হয়ে যেতে পারে।
এ ধরনের পরিস্থিতির শঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাইডেন পরিষ্কার কোনো জবাব দিতে পারেননি। বাইডেন হয়তো বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন, তবে এ ধরনের উত্তেজনা আগামী নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তবে এটাও সত্যি যে বাইডেন নন, নেতানিয়াহুই সিদ্ধান্ত নেবেন ভবিষ্যতে কী হবে।
সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে তাকে যে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু কখনোই তাতে কর্ণপাত করেননি।
জর্ডানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সদস্য মারওয়ান আল-মুয়াশের বলেন, 'নেতানিয়াহু অনেক উঁচুতে উড়ছেন। কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনে জেতানোর জন্য তিনি কিছু করবেন বলে মনে হয় না।'
গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং ১২০০ ইসরায়েলি হত্যার প্রথম বার্ষিকী পালন করছে ইসরায়েল। ওই হামলার পরে মনে হয়েছিল, নেতানিয়াহুর রাজনীতিক ক্যারিয়ারে শেষ পেরেকটিও ঠোকা হয়ে গেল।
হামাসের পরিকল্পিত অভিযানের সতর্কতা সংকেত ধরতে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা এবং নেতানিয়াহুর গাজা থেকে পশ্চিম তীরে আইডিএফ বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়া, ১৯৭৩ সালে ইসরায়েলে মিশরের ইয়ম কিপ্পুর হামলার পর ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় কৌশলগত ভুল।
তবে শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহু ইসরায়েলি রাজনৈতিক অঙ্গণে টিকে আছেন এবং এমনকি আগের চেয়ে তার অবস্থান এখন আরও ভালো।
ইসরায়েলের সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে আগাম নির্বাচন হলে তার দল 'লিকুদ পার্টি' সবচেয়ে বেশি সফলতা পেতে পারে। ইসরায়েলিদের একটি বড় অংশ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধী। অন্যদিকে, এই বিষয়ে বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইসরায়েলের চূড়ান্ত লক্ষ্য এটাই হওয়া উচিত।
বাইডেনের বারবার অনুরোধ সত্বেও, দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে গাজা যুদ্ধের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির সময় চূড়ান্ত করা নিয়ে টালবাহানা করছেন নেতানিয়াহু।
ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল সালেম লেবানন থেকে বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম নেতানিয়াহু হয়তো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তিনি শুধু ঘুরেই দাড়াননি; তার অবস্থা আগের চেয়েও ভালো।'
তবে বাইডেনই একমাত্র মার্কিন ব্যক্তিত্ব নন, যাকে খুব সফলভাবেই নেতানিয়াহু বিভ্রান্ত করেছেন। গত মার্চে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচিত ইহুদি-আমেরিকান চাক শুমার ইসরায়েলে নির্বাচন আয়োজন এবং নতুন নের্তৃত্ব নির্বাচনের আহ্বান জানান।
সিনেটে দেওয়া এক বক্তৃতায় শুমার বলেন, 'ইসরায়েলের সর্বোত্তম স্বার্থের চেয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সঠিক পথ থেকে সরে গেছেন।'
এর দুই সপ্তাহ পর ইসরায়েল দামেস্কে ইরানের একটি কূটনৈতিক কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারসহ ১৬ জনকে হত্যা করে। এর ফলে প্রথমবারের মতো ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি হামলার সূচনা হয়। এটি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের সূচনাও করেছিল।
গত জুলাইয়ে ওয়াশিংটনে কংগ্রেসের যৌথ কক্ষে ভাষণ দেন নেতানিয়াহু। সেদিন তিনি ৫২টি স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছেন। এদিন যারা তার প্রশংসা করেছিলেন, তাদের মধ্যে শুমারও ছিলেন। তবে গত এক মাসে গাজা থেকে মুখ ঘুরিয়ে লেবাননে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ অভিযান চালোনো নিয়ে তিনি কোনো বাহবা দেননি।
এই অভিযানে মোসাদকে সফল বলতেই হয়, হাজার হাজার হ্যান্ডহেল্ড পেজার ও ওয়াকিটকির বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহকে চাপে ফেলেছে ইসরায়েল।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, দেশটিতে ইসরায়েলের চলমান বোমাবর্ষণে ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। একইসাথে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এই হামলার সফলতা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হৃতপ্রায় মনোবলের গৌরব পুনরুদ্ধার করেছে।
অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গেও বারবার চাতুর্য করতে দেখা যাচ্ছে নেতানিয়াহুকে। গত এক বছরে অসংখ্যবার নেতানিয়াহুকে বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একমত হতে দেখা গেলেও, বাস্তবে তার উল্টোটাই করতে দেখা গেছে। তা সে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির শর্ত নিয়ে বিরোধ হোক বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্প্রতি ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির চেষ্টাই হোক, প্রতিবারই বাইডেনকে একেবারে অসহায় মনে হয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে যা ঘটবে তা মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।
এক পর্যায়ে ইসরায়েল ইরানের ওপর পাল্টা আঘাত হানবে। প্রশ্ন হচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিশোধ কি 'উত্তেজনা প্রশমন' পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে যেমনটা হয়েছে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালানোর পর; নাকি এটি উত্তেজনা এত বাড়াবে, যা শেষ পর্যন্ত ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাবে।
আবার ইরানের সরকারকে উৎখাতের ইসরায়েলি চেষ্টার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নেতানিয়াহু এ সপ্তাহের শুরুতে 'পারস্য' জনগণের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন: 'ইরান চূড়ান্তভাবে মুক্ত হবে, মানুষ যা ভাবছে তার চেয়ে অনেক তাড়াতাড়িই সেই মুহূর্তটি আসবে, তখন সব সমস্যা মিটে যাবে। আমাদের দুটি প্রাচীন জাতি, অবশেষে ইহুদি জনগণ এবং পারস্যের জনগণ শান্তিতে থাকবে।'
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের জামাতা ও তার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক দূত জ্যারেড কুশনার ইরানের সরকার পরিবর্তনে ইসরায়েলি প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুশনার লিখেছেন, 'ইরান এখন পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে। হুমকি নিরসনে এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হওয়াটা হবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।'
তবে ইসরায়েলের সামান্য ভুলের জন্যও গুরুতর মাশুল দিতে হতে পারে।
বাইডেনের সাবেক আঞ্চলিক দূত এবং বারাক ওবামার প্রশাসনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সের নেতৃত্বদানকারী জেফরি ফেল্টম্যান বলেন, 'সবকিছু ইঙ্গিত করছে যে আগামীতে নেতানিয়াহু আরও অনেক নতুন বিস্ময় দেখাতে পারে। ইসরায়েলের ট্যাকটিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য, ইসরায়েলি জনমত এবং নেতানিয়াহুর রাজনীতিতে টিকে থাকা- এই তিনটি বিষয় এক সুঁতোয় বাঁধা।'
ট্যাকটিক্যালি, হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের হামলা এবং দক্ষিণ লেবাননে আগ্রাসন ইসরায়েলি জনগণকে দেখিয়েছে যে নেতানিয়াহু প্রায় ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলিকে উত্তর ইসরায়েলে তাদের বাড়িতে ফেরাতে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
স্ট্র্যাটেজিক্যালি, ইসরায়েলের অভিযান হিজবুল্লাহ'র নেতৃত্বকে ধ্বংস করেছে এবং ইরানকে ব্যাকফুটে ফেলে বৃহত্তর অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনছে।
৭ অক্টোবর পরবর্তী যুদ্ধের এই নতুন পর্ব ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে দারুণভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঘটনার গতিপথ নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নতুন পালক যোগ করছে। নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারলে তার বিরুদ্ধে থাকা অসংখ্য ফৌজদারি অভিযোগ থেকে বাঁচতে পারবেন।
ফেল্টম্যান বলেন, 'এটি নেতানিয়াহুর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্ড।'
ওয়াশিংটনের ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নেতানিয়াহুর লাগাম টেনে ধরতে বাইডেনের ব্যর্থতা এবং নির্বাচনে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের সংকট থেকে আমেরিকাকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন বাইডেন। অথচ সেই বাইডেনই এখন মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বালিয়ে ক্ষমতা ছাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার ক্ষমতাকালে এই অঞ্চলে ৪০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন এবং দুটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের দরজা খুলে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তার পরবর্তী উত্তরাধিকারকে বিপন্ন করতে পারে।
তবে বাইডেন এখন আর কোনো কিছু করতে পারবেন বলে কেউই আর আশা করছেন না।
আল-মুয়াশের বলেন, 'বাইডেন কেন এত নিষ্ক্রিয়, তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কেউ আমাকে দিতে পারেনি।'
হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা ছাড়াও ৭ অক্টোবরের পর বাইডেনের দুটি লক্ষ্য ছিল। প্রথমটি ছিল গাজা শাসনের পরিকল্পনা নিশ্চিত করা, যা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে। দ্বিতীয়টি ছিল এই অঞ্চলে যুদ্ধের বিস্তৃতি বন্ধ করা। প্রথম লক্ষ্য একেবারে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ইসরায়েলিরাই নয়, ফিলিস্তিনিরাও ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ধারণার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। দ্বিতীয় লক্ষ্যটিও ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে।
তাই গত মাসের অস্থিরতা যদি নির্বাচন পর্যন্ত প্রসারিত হয়, তাহলে বাইডেনের প্রেসিডেন্সি ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই শেষ হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি