গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়কে তীব্র যানজট
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২১দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। আন্দোলনের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে মহাসড়কে।
সরেজমিনের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৮টায় কাজে যোগ না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কোম্পানিটির সহস্রাধিক শ্রমিক। এ সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা আন্দোলনকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে, তাদেরকে ধাওয়া দেন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হয়নি।
খবর নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কারণে কোম্পানিটিতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এর মধ্যে গত ১০ অক্টোবর কোম্পানি কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়।
শ্রমিকদের দাবি, সেদিন সরকারি ঘোষণা উপেক্ষা করে বন্ধের দিন কারখানা খোলা রাখা এবং একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছুটি না দিয়ে তার সাথে উল্টো খারাপ আচরণ করা হয়। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে না নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান সেই শ্রমিক। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এরপর থেকেই তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্যে স্বপন মিয়া বলেন, "কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে যে আচরণ করে তা অমানবিক। সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না তারা। জোর করে শ্রমিকদের ওভারটাইম করতে বাধ্য করা হয়। অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন কারণে বাধ্য হয়ে ২১ দফা দাবি নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি।"
আরেক আন্দোলনকারী দীপক সরকার বলেন, "আমাদের কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের ভেতরে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ না করতে পারলে বেতন কেটে রাখা হয়। সরকারি ছুটি এমনকি ঈদের সময়ও আমরা ছুটি পাই না। এরকম অমানবিক নিয়ম অন্য কোনো কোম্পানিতে আছে কিনা আমরা জানিনা। দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ক্ষোভে আজ আমরা বাধ্য হয়ে পথে নেমেছি।"
আন্দোলনকারী লিপি আক্তার বলেন, "লাঞ্চ আওয়ারের পরে আমাদের ওয়াশরুমে যেতে দেওয়া হয় না। জরুরি প্রয়োজনে অফিস আওয়ারে আমরা বাসায় এক মিনিটও কথা বলতে পারিনা। পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার। সবকিছু মিলিয়ে আজকের এই আন্দোলন।"
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, "খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি, প্রয়োজন হলে তাদের পক্ষ থেকে আমি মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে ন্যায্য দাবিগুলো আদায় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।"
"কিন্তু তারা আমার কথা শুনছে না," যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মাসুম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমরা এই মুহূর্তে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা শ্রমিকপক্ষের সাথে কথা বলতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।"
এদিকে সকাল সাড়ে নয়টায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন গজারয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের তিনি মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন। তবে তার আশ্বসেও সড়ক ছাড়েন্নি শ্রমিকরা।
সকাল সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশে অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।