সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জন নিহত, আহত ৯৭৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৫৪৭টি দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন নিহত এবং ১০৩৮ জন আহত হয়েছেন।
এর মধ্যে ৪৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৯৭৮ জন। রেলপথে ৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ৫৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও নিখোঁজ হয়েছেন ৪৭ জন।
১৯২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত ও ১৪৯ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮.৯৪ শতাংশ, নিহতের ৩৯.১৫ শতাংশ ও আহতের ১৫.২৩ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৬টি। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৯ জন ও আহতের সংখ্যা ২৫১ জন।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে জানা যায়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৯ জন চালক, ৮৭ জন পথচারী, ৪৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫১ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক, ৬৮ জন নারী, ৫৬ জন শিশু, ২ জন চিকিৎসক এবং ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এদের মধ্যে নিহত হয়েছে ৪ জন পুলিশ সদস্য, ২ সেনা সদস্য, ১ আনসার সদস্য, ৯৪ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৮৬ জন পথচারী, ৫২ জন নারী, ৪১ জন শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ১২ জন শিক্ষক, ২ জন চিকিৎসক ও ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া ৭৯২টি যানবাহনের ২৭.৫২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১.৭১ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৩.২৫ শতাংশ বাস, ১৫.১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৭.৪৪ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৭.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৭.৫৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৮.০৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৭.৯৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮.০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৫.০৭ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.২০ শতাংশ ট্রেন যানবাহনে সংঘর্ষ এবং চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.২০ শতাংশ।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৫.২৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২২.৭১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৬.৩৬ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৬৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে ও ১.৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ০.৬০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলো হলো:
১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতি সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল।
২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকা এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে সৃষ্ট বড় বড় গর্ত।
৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টানিং চিহ্ন না থাকা
৪. মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি দুর্ঘটনার প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো:
১. জরুরিভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরি এবং যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস দেওয়া।
৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।
৭. সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।
৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়ানো।
৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।
১১. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা।