সিনওয়ারের শেষ কয়েক মুহূর্ত
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেছেন, "হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবরের গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দায়ী গণহত্যাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে আজ [বৃহস্পতিবার] ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সৈন্যরা হত্যা করেছে।"
হামাস সূত্রও জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার-এর শেষ মুহূর্তের ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছে। ফুটেজে দেখা গেছে, গাজার একটি ধ্বংস হওয়া অ্যাপার্টমেন্টে তিনি ধুলোয় মাখা চেয়ারে মাথা ও মুখ স্কার্ফে ঢাকা অবস্থায় হেলান দিয়ে আছেন।
ফুটেজে দেখা গেছে, তার ডান হাত গুরুতরভাবে আহত এবং তিনি তার মাথার ওপর দিয়ে একটি লাঠি ড্রোনের দিকে ছুঁড়ে দেন। তবে দ্য গার্ডিয়ান এই ফুটেজের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, ড্রোন ফুটেজ ধারণ করার সময় ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে একজন যোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। এরপরই ভবনটিতে অতিরিক্ত শেল ছোড়া হয়। এতে ভবনটি ধসে পড়ে এবং সিনওয়ার নিহত হন। হাগারি বলেন, সিনওয়ারের সাথে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, গ্রেনেড এবং ৪০ হাজার শেকেল (১০ হাজার ৭০৭ ডলার) ছিল।
জেরুজালেম পোস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, "সিনওয়ার একা একটি ভবনে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের বাহিনী ড্রোন ব্যবহার করে এলাকাটি স্ক্যান করেছিল, যা আপনারা এখানে (ফুটেজ) দেখছেন।"
তিনি আরও বলেন, "সিনওয়ার গুলিতে হাতে আঘাত পেয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে তার মুখ ঢেকে রেখেছিলেন এবং ড্রোনের দিকে একটি কাঠের টুকরো ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।"
আইডিএফ জানিয়েছে, সিনওয়ার পালানোর চেষ্টা করলেও তাদের বাহিনী তাকে হত্যা করে। হামাস এখনও সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে সিনওয়ারের মতো দেখতে একজন ব্যক্তির মৃতদেহ দেখা গেছে, যার মাথায় বড় ক্ষত রয়েছে এবং তিনি একটি সামরিক ভেস্ট পরিহিত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আধা চাপা পড়ে আছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার দক্ষিণ গাজার তাল এল সুলতান এলাকায় সিনওয়ারকে অনুসন্ধানকারী সেনারা তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। ওই এলাকায় হামাসের ঊর্ধ্বতন নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল এবং সেখানে তিনজন সন্দেহভাজনকে ভবনের মধ্যে ঘুরতে দেখে সেনারা গুলি চালায়। গোলাগুলির সময় সিনওয়ার একটি বিধ্বস্ত ভবনের মধ্যে পালিয়ে যান।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিনওয়ার সম্ভবত এমন সব যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তার অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করতো। কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, সিনওয়ার হামাসের দীর্ঘদিন ধরে খনন করা গাজার নিচের সুড়ঙ্গের জটিল নেটওয়ার্কে লুকিয়ে ছিলেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী যতই সুড়ঙ্গগুলো শনাক্ত করছে, ততই তার পক্ষে সেখানে নিরাপদ থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল।
মাসের পর মাস গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিনওয়ারকে খুঁজছিল এবং তার চলাচলের এলাকা ক্রমশ সীমিত করে আনছিল। ডেন্টাল রেকর্ড, আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।