যেভাবে সময় কাটছে করোনা আক্রান্ত আবু জায়েদের
দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলের অনুশীলন, খবরটি শুনেই চনমনে হয়ে ওঠেন ক্রিকেটাররা। স্কিল ক্যাম্পের অংশ হিসেবে ২০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে হোটেল সোনাগাঁওয়ে উঠতে শুরু করেন তারা। কিন্তু ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ২৭ ক্রিকেটারের মধ্যে ১১ জনের হোটেলে ওঠা হয়নি। সে সময় করোনা আক্রান্ত ছিলেন সাইফ হাসান। উপসর্গ আছে, এমন দুজন ক্রিকেটারের সংস্পর্শে যাওয়ায় বাকি ১০ জনকে একাডেমি ভবনে আইসোলেশনে থাকতে হয়।
২২ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পরীক্ষায় জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আবু জায়েদ রাহি। করোনা নেগেটিভ হওয়ায় আইসোলেশনে থাকা বাকি ক্রিকেটাররা অনুশীলনে যোগ দেন। বন্দি হয়েই থাকতে হয় আবু জায়েদকে। ২৬ ক্রিকেটার সাত দিনের অনুশীলন সেরে তিন দিনের বিশ্রামেও চলে গেছেন। কিন্তু তুমুল আগ্রহ নিয়ে সিলেট থেকে ঢাকা এসে একদিনও অনুশীলন করা হয়নি আবু জায়েদের।
মিরপুরে বিসিবির একাডেমি ভবনে চিকিৎসাধীন আছেন জাতীয় দলের ডানহাতি এই পেসার। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে আবু জায়েদের নিত্যসঙ্গী। নামাজ পড়ছেন, কুরআন তেলাওয়াত করছেন। পরিবারের সবার সঙ্গে ফোনে নিয়মিত কথা হচ্ছে তার।
রোববার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে আবু জায়েদ শরীরের অবস্থা জানিয়ে বলেন, 'আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছি, সুস্থ আছি। যদিও আমার শরীরের অবস্থা আগেও খারাপ ছিল না। আক্রান্ত হলেও তেমন সমস্যা ছিল না আমার। শুধু নাকে গন্ধ পাইনি। এ ছাড়া কোনো উপসর্গ ছিল না। জ্বর বা সর্দি, এমন কিছু নেই। আগেও ছিল না। শুধু গন্ধ চলে গিয়েছিল।'
আবু জায়েদের মূল সমস্যা ছিল ঘ্রাণশক্তি কাজ না করা। সেটাও এখন ভালোর পর্যায়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৯ টেস্ট, ২ ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই পেসার বলেন, 'রুমের মধ্যেই আছি। প্রথম দিকে যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। মাঝখানে শুধু গন্ধ হারিয়েছিলাম। এখন আস্তে আস্তে গন্ধ ফিরে আসছে। এখন গন্ধ পাচ্ছি।'
একাডেমি ভবনে একটি রুমের মধ্যে কীভাবে সময় কাটছে? আবু জায়েদ বলেন, 'সত্যি বলতে ঘরে বন্দি থাকলে কাজের তো কিছু থাকে না। কাজ থাকলেও এই সময়ে আপনি করতে পারবেন না, সুযোগ নেই। বড় সঙ্গী এখন মোবাইল। মোবাইল নিয়ে থাকি। নামাজ পড়ছি, কুরআন তেলাওয়াত করছি। ঘর পরিষ্কার করছি।'
জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হয়ে প্রথমভাগের অংশও শেষ। এতো কাছে থেকেও আবু জায়েদ অনুশীলনে যোগ দিতে পারেননি। খারাপ লাগার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'অনুশীলন শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেল। আবার শুরু হবে। কিন্তু শুরু থেকে আমি থাকতে পারলাম না। খারাপ লেগেছে, এখনও লাগছে যে এতদিন পর অনুশীলন শুরু হলো, কিন্তু আমি করতে পারলাম না। তবে এখানে তো কিছু করারও নেই।'
গত ১৯ জুলাই থেকেই অনুশীলন করায় খুব বেশি আফসোস করছেন না আবু জায়েদের, 'ভালো ব্যাপার হচ্ছে দুই মাস আগে অনুশীলন করতে পেরেছি। রানিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবই করেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ঠিক আছি। আক্রান্ত যখন হয়েই গেছি, আর তো কিছু করার নেই। যত দ্রুত সেরে উঠতে পারি, ততই ভালো।'
পরিবার ও বিসিবির চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে আবু জায়েদের। বাংলাদেশের টেস্ট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য বলেন, 'পরিবারের সবার সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথা হচ্ছে। উনারা নিয়মিত তদারকি করছেন। প্রতিদিনই ফোন করছেন। দেবাশীষ দাদা খোঁজ রাখছেন। দাদা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। উনি প্রতিদিনই ফোন দিয়ে আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।'
নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে আবু জায়েদের মনে হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষাতেই তিনি নেগেটিভ হয়ে যাবেন, 'শরীরের যে অবস্থা, তাতে আমি আশা করছি যে, ৩০ তারিখের যে করোনা পরীক্ষা আছে, তাতে হয়তো নেগেটিভ ফল আসবে। কিন্তু এটা তো আগে থেকেই বলা যায় না। তবে শরীরের অবস্থা ভালো হওয়ায় এমন মনে হচ্ছে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।'
কোয়ারেন্টিনের সময় ও স্বাস্থ্য বিধির জটিলতায় অন্ধকারেই আছে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরের ভাগ্য। তবে বিসিবি নিজেদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে সিরিজ পিছিয়েও গেছে। আগামী ৭ থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে শ্রীলঙ্কা যেতে পারে বাংলাদেশ। কবে থেকে সিরিজ শুরু, এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি।