মুদিপণ্য থেকে ব্যক্তিগত পরিচর্যা: সবরকম কেনাকাটায় কৃচ্ছ্রতায় ভোক্তারা
মুদিপণ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পরিচর্যার পণ্য, বাংলাদেশে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদায় এভাবেই পতন দেখা যাচ্ছে। খুচরা পণ্য বিপণন শিল্পের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই মন্দার ফলে সাময়িক পুনরুদ্ধারের লক্ষণও ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষত গত জুলাই থেকে চাহিদার খাড়া পতনের বিষয়টি উল্লেখ করেছে রিটেইলার বা খুচরা বিক্রেতারা। তারা বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হয়ে কমছে গৃহস্থালি ব্যয়, যার কারণে অনেক পরিবারই টুকিটাকি অন্যান্য জিনিস কেনার চেয়ে অপরিহার্য পণ্য কেনাতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
গরু বা খাসির গোশতের চেয়ে কম দামের প্রোটিনের উৎস মুরগি ও মাছের মতো খাবারের বিক্রিবাট্টাও অক্টোবরে আগের মাসের চেয়ে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
দেশের সর্ববৃহৎ সুপারমার্কেট চেইন 'স্বপ্ন'র করা সাম্প্রতিক সময়ের একটি ভোক্তা আস্থা সূচক (সিসিআই) জরিপে উঠে এসেছে করুণ চিত্র, যেখানে ব্যক্তির অর্থকড়ি ব্যয় ও সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক নিরাশার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
অর্গানাইজেশন ও ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর তৈরি করা ভোক্তার আস্থা/ মনোভাব যাচাইয়ের জরিপ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে স্বপ্ন'র সিসিআই জরিপও তৈরি করা হয়, এটি বলছে, অক্টোবরে ভোক্তা আস্থা নেমে এসেছে মাত্র ৩২.৫ শতাংশে। অর্থাৎ, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের বিষয়ে গভীর শঙ্কা রয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে, কারণ এই সূচকে আস্থার সূচক ৫০ শতাংশের নিচে থাকা মানেই হচ্ছে নেতিবাচক মনোভাব।
এরমধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন খুবই কম বা মাত্র ২১.৫ শতাংশ, আর ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির সূচক একটু বেশি বা ৪৩.৮ শতাংশে অবস্থান করলেও – ইতিবাচক পরিস্থিতির জন্য যা থাকা দরকার, তার চেয়ে কম।
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার ৩৩০ জোন ভোক্তার মধ্যে পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, গৃহস্থালি পর্যায়ে ব্যয় নিয়েই বেশি হতাশা মানুষের মধ্যে, এবং তা বর্তমান ও আগামী ছয় মাসের পরিস্থিতি উভয় প্রেক্ষাপটেই। এসব মনোভাব উঠে আসে যে সূচকে, সেই গৃহস্থালি ব্যয় সক্ষমতা ইনডেক্স মাত্র ১ হওয়ার মতো আশঙ্কাজনক স্কোর করেছে।
পণ্য মূল্যের স্তর নিয়েও ভোক্তাদের ধারণা একই রকম মলীন, সূচকে যার মূল্যায়ন হচ্ছে ৭। যেহেতু, নিত্যপণ্যের দাম ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ার ফলে ভোক্তারা যে চাপের মধ্যেই আছেন।
গৃহস্থালি বা পারিবারিক আয়ের আস্থার ইনডেক্স স্কোর হলো ৩৬.২, যা আয়ে কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস দেয়। তবে পরিবারের আর্থিক অবস্থার ৩০.৭ স্কোর ইঙ্গিত দেয় যে, আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতিই বেশি। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতির মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে আয়ের যেকোনো বৃদ্ধি।
অর্থাৎ, কোনো ইনডেক্স-ই ইতিবাচক অবস্থানের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি, জাতীয় অর্থনীতির বিষয়ে ভোক্তা মনোভাবের স্কোরও মাত্র ৩৯।
সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ করা গেছে – রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার ভোক্তাদের মধ্যে, যেখানে সিসিআই জরিপে সবার মত ৩০ স্কোরেরও নিচে। সে তুলনায়, রংপুরে তা অনেকটাই বেশি বা ৫৪.৬ শতাংশ, যা অঞ্চলটিতে ভোক্তা আস্থা তুলনামূলক শক্তিশালী অবস্থানে থাকার ইঙ্গিত দেয়।
অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জন্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছেন ৪৭.৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী, তবে ২৯.৯ শতাংশ দায়ী করেন সার্বিক অর্থনীতির অবস্থাকে। এর বাইরে, বন্যা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি-সহ অন্যান্য অনুঘটককে উদ্বেগের গৌণ কারণ হিসেবে মত দেন ভোক্তারা।
চাহিদায় মন্থরতা
দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ গ্রুপ— দেশের খাদ্যপণ্য বাজারের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মতো নিয়ন্ত্রণ করে, যারা আগে বার্ষিক বিক্রিতে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি করেছে, তারাও এখন বিক্রি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, কোনখানে ব্যয় করবেন—ভোক্তাদের এখন সেই অগ্রাধিকার ঠিক করতে হচ্ছে, এই অবস্থায় অনেক সেগমেন্টেই চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
তবে রুটি, বিস্কুট, মুড়ি, মশলা, চকোলেট, দুধ ও নানান রকম পানীয়সহ প্রায় ৮০০ ধরনের পণ্যসম্ভার রয়েছে প্রাণ- এর, যার ফলে এখনও তাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচকে নামেনি।
কামরুজ্জামান জানান, আমাদের পণ্যগুলোর ধরন, নিত্যনতুন পণ্য সংযোজন ও ভোক্তার কথা বিবেচনা করে দাম নির্ধারণের কৌশলের মাধ্যমে বিক্রিবাট্টার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়েছে।
তবে আর্থিক চাপের মধ্যে ভোক্তাদের এমনকী নিত্যপণ্য বাদ দিয়েও শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক পণ্যের দিকেই আরও ঝুঁকতে হচ্ছে, এই অবস্থায় বাদ পড়া পণ্যগুলোর বিক্রিবাট্টার পরিস্থিতি অনেকটাই দুর্বল।
শিশুখাদ্যের বিক্রি কমেছে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নেসলে'র বাংলাদেশে বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার, দেশের শিশুখাদ্যের বাজারের ৬০ শতাংশই তাদের দখলে। কফি, নুডলস ও চকলেটের মতো পণ্যেও বাজার নেতৃত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, নেসলে বাংলাদেশের বিক্রিবাট্টা কমেছে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত, এমনটাই জানান প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক দেবব্রত রায়।
টিবিএসকে তিনি বলেন, 'অবশ্য মূল্যস্ফীতির চাপে গত দুই বছর ধরেই বেবি ফুডের বিক্রি কমছিল। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়, যার ফলে বিক্রিতে নেগেটিভ গ্রোথ হচ্ছে।'
সস্তা বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে ভোক্তা
সাবান, শ্যাম্পু, প্রসাধনীসহ দেশের ব্যক্তিগত পরিচর্যায় ব্যবহৃত পণ্যের ৫০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে বাজারে এখাতে বাজার নেতৃত্ব দেয় ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এই প্রতিষ্ঠানও তাদের পণ্যগুলোর দুর্বল চাহিদা এবং ভোক্তাদের তুলনামূলক সস্তা পণ্যের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা লক্ষ করছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জাভেদ আখতার টিবিএসকে বলেন, চড়া মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে দেশের ফাস্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস (এফএমসিজি) এর বাজার এক বছরের বেশি সময় ধরে কমছে। ' তবে এই পতনের গতি কিছুটা মন্থর হয়ে আসলেও, এখনও তা ৫ শতাংশ কমছে।'
টিবিএসকে দেওয়া এর আগের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, উচ্চমানের সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, ফেসিয়াল ক্রিম ও ডিটারজেন্টের মতো প্রিমিয়াম পণ্যের বিক্রিবাট্টা কমে গেছে, তবে একইসঙ্গে মিনিপ্যাক-সহ সস্তা বিকল্পগুলোর চাহিদা বেড়েছে।
ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রিন বা হুইলের তুলনায় সার্ফ একটি উচ্চ মানের ও দামি ডিটারজেন্টের ব্র্যান্ড। তবে ভোক্তাদের ক্রয় সক্ষমতা কমে আসায়, অনেকেই সার্ফ কেনা বাদ দিয়ে তুলনামূলক কম দামের রিন ডিটারজেন্ট কিনছেন। একইসময়ে হুইলের মিনি প্যাকের বিক্রিও বেড়েছে। একইভাবে, শ্যাম্পুর বোতল কেনার চেয়ে ৩ থেকে ৫ টাকা দামের মিনি প্যাক কেনার দিকেও আরও বেশি ঝুঁকছেন ভোক্তারা।
হরলিক্সের চাহিদা কমছেই
ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের পণ্য হরলিক্সের বিক্রিতেও ভাটা পড়েছে। ২০২১ সালে যেখানে এই পণ্যের বিক্রি ছিল ৭ হাজার ৩৭১ টন, ২০২৩ সালেই তা নেমে আসে ৫ হাজার ৪৩৩ টনে।
হরলিক্সের বড় প্যাক বা জারের বিক্রি কমার বিষয়ে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার এর চেয়ারম্যান মাসুদ খান বলেন, মিনি প্যাকের প্রসারে গুরুত্ব দিয়ে কোম্পানিটি ২০২২ ও ২০২৩ সালে আরও অনেক পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে গ্রাহকরা তাদের কোমড়ের বেল্ট আঁটো করছেন, যেকারণে বিক্রির পরিমাণে ধস নামা আর এড়ানো যায়নি। তবে দাম বাড়িয়ে মূল সমন্বয় করে, পরিচালনগত দক্ষতা ও আয় বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে মুনাফা ধরে রাখা গেছে।
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই হেলথ ফুড ড্রিংকের ভোগ চাহিদায় ধস চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেও অব্যাহত রয়েছে। কোম্পানির আর্থিক বিবৃতি অনুযায়ী, হরলিক্সের অর্ধ-বার্ষিক বিক্রি নেমে এসেছে ২ হাজার ২৬৪ টনে, গতবছরের একইসময়ে যা ছিল ২ হাজার ৪২৮ টন।
মাসুদ বলেন, 'এবছরের শুরুর বেশ কয়েক মাস বিক্রিতে পুনরুদ্ধার দেখে আমাদের প্রতিষ্ঠান, এরপর চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে তা আবারো মন্থর হয়ে পড়ে।'
বিক্রি ধরে রাখতে মুনাফা কমাতে হচ্ছে সুপারমার্কেটগুলোকে
সুপারমার্কেট চেইন মীনা বাজারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আহমেদ জায়গিরদার বলেন, 'নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যয় বাড়াতে কষ্টের মধ্যে আছে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।' এই অবস্থায়, সুপারমার্কেট চেইনগুলোকে তাদের মুনাফা মার্জিনের সাথে আপোষ করে 'মার্কেট কুলিং' এজেন্টের ভূমিকা নিয়ে বিক্রি ধরে রাখার চেষ্টা করতে হচ্ছে। ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে তারা ডিম ও সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যে মুল্যছাড় অফার করছে।
তিনি বলেন, বেশি দামের কারণে হয়তো খুচরো বিক্রির টার্নওভার বজায় থাকতে পারে, কিন্তু ভোক্তারা পরিমাণের দিক থেকে কম কিনছেন। যেমন সবজির দামে ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কারণে মীনা বাজারের এই সেগমেন্টে বিক্রির পরিমাণ ১০ শতাংশ কমেছে।
সম্পন্ন বা ধনীরা বসবাস করেন এমন আবাসিক এলাকাগুলোতে অবশ্য বিক্রির মন্দার প্রভাব বেশ কম। স্বাভাবিকভাবেই সে তুলনায়, গড় আয়ের মানুষের বসবাস এমন অঞ্চলের ভোক্তাদের টানাপোড়েন বেশি বলে জানান তিনি।
দেশজুড়ে স্বপ্ন এর ৫০০টির বেশি আউটলেট রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক গ্রাহক তাদের পছন্দের স্বাস্থ্য-বান্ধব খাবার বা বিভিন্ন প্রিমিয়াম আইটেম বাজারের থলে থেকে বাদ দিচ্ছেন, কারণ তাদের একটা বাজেটের মধ্যে চলতে হচ্ছে।
কম দামের বিকল্প পণ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনার দিকে মানুষের এই ঝোঁক সাধারণত প্রতিকূল সময়গুলোতে লক্ষ করা যায়। যেমন আমদানি করা অ্যাপল সিডার ভিনেগার, দামি নাড়িকেল তেল, সূর্যমুখীর তেল ও বিভিন্ন ধরনের বাদামের বিক্রি কয়েক বছর ধরে বাড়ার পরে – এখন তাতে খাড়া পতন দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'টাকা সাশ্রয়ের জন্য অনেকেই এখন প্যাকেটজাত পণ্যের বদলে খোলা পণ্য কিনছেন।' দামি ব্যক্তিগত প্রসাধনী, লাইফস্টাইল প্রোডাক্টসহ সাধারণ ভোগ্যপণ্যের বিক্রিতেও ধস দেখা যাচ্ছে বলে জানান নাসির।
জুতার পেছনে আগের মতো খরচ করছে না ক্রেতা
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কাজুরি বলেন, গত দুই বছর ধরে গ্রাহকদের টানাটানি খুব স্পষ্টভাবেই লক্ষ করছি আমরা, তবে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে তারা খরচের বিষয়ে আরও রক্ষণশীল হয়ে পড়েছেন।
সেপ্টেম্বরের শেষে অ্যাপেক্স ফাউন্ডার্স ডে'তে দেশব্যাপী তাদের শাখাগুলোয় বিপুল পরিমাণ গ্রাহককে টানতে বড় মূল্যছাড় দেওয়া হয়। এবছরে এই সেলস ফেস্টিভ্যালের দিন খারাপ আবহাওয়ার কারণে একদিন বাড়ানোও হয়, এরপরেও গত বছরের ফাউন্ডার্স ডে'র চেয়ে সামান্যই ছাড়ায় বিক্রির পরিমাণ।
বড় কোনো উৎসব ছাড়া এখন বেশিরভাগ গ্রাহকই নতুন জেতা কেনার কথা সেভাবে ভাবছেন না, অন্তত যতদিন না তাদের ব্যবহৃত জুতাটি বদলানোর প্রয়োজন দেখা দেয় বা বড় মূল্যছাড় পাওয়া যায়।
দিলীপ বলেন, 'বেশিরভাগ মানুষ এখন অপেক্ষাকৃত কম দামের জুতা কিনছে। যেমন আমাদের একজন নিয়মিত গ্রাহক যিনি অনেক বছর ধরে পাঁচ হাজার টাকার জুতা কিনতেন, তিনিও এখন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার জুতা কেনেন। বেশিরভাগ গ্রাহকের ক্ষেত্রেই একই অবস্থা।'
'বিকল্প বা তুলনামূলক কম দামের জুতার মাধ্যমেই আমরা বিক্রির পরিমাণ ধরে রাখতে পারছি' জানান তিনি।
ফ্যাশন পণ্যের বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে
ফ্যাশন হাউজ 'রঙ বাংলাদেশ' এর সিইও সৌমিক দাস টিবিএসকে বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ভারত থেকে কেনাকাটা বা স্থানীয় বাজার থেকে ভারতীয় পণ্যের কেনাকাটা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যেকারণে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া কিছু ব্র্যান্ড দুর্গাপুজায় বিক্রিটা ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু, পূজার পরে আবারো বিক্রিতে ধস নেমেছে, কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে মানুষ নিত্যদিনের চাহিদা মেটানোকেই এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
ফ্যাশনওয়্যারের বিক্রি সাধারণত মাসে যা হয়, তার চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে বলে জানান ফ্যাশন এন্টারপ্রের্নর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি আজহারুল হক আজাদ।
জনপ্রিয় আরেকটি ফ্যাশন হাউজের 'সাদা কালো'র-ও প্রতিষ্ঠাতা আজাদ। তিনি জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে এই খাতের বিক্রি ২০২১ সালের পরে সবচেয়ে কম হয়েছে।
তার সাথে একমত পোষণ করে কে ক্রাফটের ম্যানেজিং পার্টনার খালিদ মাসুদ খান বলেন, 'রেগুলার সিজনের সাথে আমরা এই অস্বাভাবিক সময়ের তুলনা করতে চাই না। তবে এই ব্যবসা পুনরুদ্ধারের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই একের পর এক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।'