রাজপরিবারের সন্তান, রাতারাতি তারকা, শাহরুখ-সালমানের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো, এক দুর্ঘটনায় ক্যারিয়ারে ইতি
সিনেমা জগতে অনেক তারকা প্রতিভা ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে চটজলদি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। আবার কিছু তারকা হুট করেই ভাগ্যের নির্মম আঘাতে চলে যান পর্দার আড়ালে। বলিউডের এমনই একজন অভিনেতা রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিলেন। চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছিলেন সালমান খান, শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমারদের। কিন্তু এক দুর্ঘটনাতেই তার অভিনয়জীবনে যবনিকা ঘটে যায়। পরে পর্দায় ফিরে এলেও দেখা পাননি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
একসময়ের আলোচিত এই তারকার নাম চন্দ্রচূড় সিং। এক স্কি দুর্ঘটনায় খ্যাতির শিখর থেকে পতন ঘটে তার।
চন্দ্রচূড় সিং পেশায় ছিলেন শিক্ষক। ১৯৬৮ সালে উত্তরপ্রদেশের আলীগড় শহরে জন্ম। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার ছিল তীব্র অনুরাগ। দিল্লির একটি স্কুলে ইতিহাসের পাশাপাশি সংগীতের ক্লাসও নিতেন তিনি।
চন্দ্রচূড় সিংয়ের শরীরে বইছে রাজবংশের রক্ত। তার বাবা বলদেব সিং ছিলেন খাইর (আলীগড়) অঞ্চলের সাবেক এমএলএ। আর তার মা ছিলেন ওড়িশার বলাঙ্গিরের মহারাজার কন্যা।
চন্দ্রচূড় ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ভভিনয়ের প্রতি তীব্র অনুরাগ তাকে শেষপর্যন্ত ১৯৯০-এর দশকে বলিউডের মায়ানগরীতে নিয়ে আসে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চন্দ্রচূড় জানান, তিন ১৯৮৮-৮৯ সালে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান। তার বলিউডযাত্রার শুরু ১৯৯০ সালে, 'আওয়ার্গি' সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে। অভিনেতা হিসেবে তার প্রথম ছবির শুটিং শুরু হয় ১৯৯০ সালে। প্রায় ৬০-৮০ শতাংশ শুটিংয়ের পর ছবিটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের পাঁচ-ছয় বছরে বেশ কয়েকটি কাজের সুযোগ পেতে পেতেও হারান। এর মধ্যে দুটি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান।
সুযোগের অভাবে চন্দ্রচূড় যখন ভাবছিলেন বলিউড ছেড়ে শিক্ষকতায় ফিরে যাবেন তখনই 'তেরে মেরে সপনে'র জন্য স্ক্রিন টেস্ট দেন। জয়া বচ্চন তাকে ছবিতে দেন। এরপর স্ক্রিন টেস্ট দিয়ে গুলজারের 'মাচিস'-এও সুযোগ পেয়ে যান।
তবে ১৯৯৬ সালে অমিতাভ বচ্চনের প্রযোজনা সংস্থা থেকে নির্মিত 'তেরে মেরে সপনে' সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে তার। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়।
দারুণ অভিষেকের পর চন্দ্রচূড় অভিনয় করেন 'মাচিস' সিনেমায়। এ ছবির পারফরম্যান্সের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ নবাগত পুরস্কার পান।
'মাচিস'-এর 'ছাপা ছাপা চরখা চলে' গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এ গান ও ছবি তাকে দর্শকদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয় করে তোলে।
পরের কয়েক বছরে চন্দ্রচূড় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল মনসুর খানের ২০০০ সালের রোমান্টিক অ্যাকশন ড্রামা 'জোশ'। এতে তিনি শাহরুখ খান ও ঐশ্বরিয়া রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন।
এছাড়া তিনি রাজ কনওয়ারের ১৯৯৯ সালের অ্যাকশন ছবি 'দাগ: দ্য ফায়ার'-এ, কুন্দন শাহের ২০০০ সালের রোমান্টিক ড্রামা 'কিয়া কেহনা'-তে প্রীতি জিনতার বিপরীতে ও ২০০১ সালের কমেডি 'আমদানি আটানি খরচা রুপাইয়া'-তে তাবুর সঙ্গে অভিনয় করেন।
অভিনয় প্রতিভা ও জনপ্রিয়তার কারণে ওই সময় তাকে শাহরুখ খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমার ও অজয় দেবগনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো।
১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে চন্দ্রচূড় এতটাই ব্যস্ত অভিনেতা হয়ে ওঠেন যে ব্লকবাস্টার 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহরুখ খান অভিনীত এই ছবিতে দ্বিতীয় প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল চন্দ্রচূড়কে। কিন্তু 'সেকেন্ড লিড' হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় তিনি এ প্রস্তাব ফিরিয়ে ফেন। পরে এই চরিত্রে সালমান খান অভিনয় করেন।
অভিনয় দিয়ে সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন চন্দ্রচূড়। এরকম যাত্রা শুরু প্রত্যেক অভিনেতারই স্বপ্ন। কিন্তু এরপরই দুর্ঘটনায় তার এই সফল যাত্রায় ছেদ পড়ে।
পিঙ্কভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চন্দ্রচূড় সিং ওই দুর্ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছিলেন। অভিনেতা জানান, গোয়ায় ওয়াটার স্কিইং করতে গিয়ে তার কাঁধে গুরুতর জখম হয়। এ ঘটনার পর তার বেশ কিছু সিনেমার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
ফিজিওথেরাপি ও সার্জারি করেও চন্দ্রচূড়ের কাঁধের সমস্যা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। এর ফলে তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করতে পারেননি।
পরে ২০১২ সালে 'চার দিন কি চাঁদনি' সিনেমা দিয়ে তিনি আবার ফিরে এলেও ছবিটি আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। তবে বেশ অনেক বছর পর রাম মাধবানির ২০২০ সালের ওয়েব সিরিজ 'আরিয়া' দিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। সেখানে তার অভিনয় প্রশংসা কুড়ায়।
তার সাম্প্রতিক কাজ ছিল অক্ষয় কুমারের 'কাঠপুতলি' (২০২২) সিনেমা। তবে এ ছবিতে তিনি তেমন আলোচনায় আসেননি।