গাজীপুরে ৩২ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ, দুর্ভোগে নাজেহাল যাত্রী-পরিবহন শ্রমিকেরা
বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরে পোশাককর্মীদের টানা ৩২ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী, পরিবহন শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ।
পুলিশ জানায়, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আজ রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের পাঁচটি কারখানার প্রায় দুই হাজার শ্রমিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভোগড়া থেকে শফিপুর পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আশপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও দিনভর তীব্র যানজট ছিল।
এদিকে অবরোধের কারণে বহু যানবাহন ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। এসব যানবাহনের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাকও রয়েছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যানজটে আটকা পড়া বেশ কয়েকজন গাড়িচালক জানান, তাদের কেউ কেউ গতকাল সকাল থেকে একই জায়গায় আটকা পড়ে আছেন। রাস্তায় গাড়ি ঘোরানোর সুযোগ না থাকায় গাড়ি ঘুরিয়ে পেছনেও যেতে পারছেন না তারা।
দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা থাকার পর অনেক যাত্রীকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করতে দেখা যায়। অনেককেই আবার কোনো গাড়ি পাওয়া যায় কি না, সেই আশায় বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনরত শ্রমিকদের বহুবার বুঝিয়েও মহাসড়ক থেকে সরাতে পারেননি। শ্রমিকরা মহাসড়কেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাদের দাবি, বেতন না নিয়ে তারা মহাসড়ক ছাড়বেন না।
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে গাজীপুরের প্রায় ৩০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানাগুলো হলো, অমিতি সোয়েটার লিমিটেড, সেপাল গ্রুপ, কাশফি নীট ওয়্যার লিমিটেড, এ্যামাজিং ফ্যাশন লিমিটেড, ব্যান্ডস এ্যাপারেলস লিমিটেড, ফাইন সোয়েটার লিমিটেড, রোবা ফ্যাশন লিমিটেড, কলম্বিয়া গার্মেন্টস লিমিটেড এবং রভিয়া কম্পোজিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ অন্যান্য।
শ্রমিকরা জানান, এর আগেও অনেকবার বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ কথা রাখেনি। তাই বেতন ছাড়া মহাসড়ক ছাড়বেন না তারা।
তারা আরও জানান, বাসা ভাড়া, দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। তাদের ঘরে খাবার নেই, সন্তানকে বাবা কিংবা অন্য স্বজনদের কাছে রেখে বেতনের দাবিতে তারা সারারাত সড়কে কাটিয়েছেন।
মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা স্বীকার করে শ্রমিকরা বলেন, আমাদের কষ্টের কথাও সবাইকে বুঝতে হবে। আমরাও ইচ্ছা করে গতকাল থেকে সড়কে রাত জেগে বসে থাকিনি। আমরা আমাদের বকেয়া বেতন পেলেই অবরোধ তুলে নেব।
শিল্প পুলিশ জানায়, বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষ গত ২৩ অক্টোবর নির্ধারণ করেও বেতন পরিশোধ করেননি। পরে সেনাবাহিনী, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে করে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ৩ নভেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন ২০ নভেম্বর পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে বেতন পরিশোধ করেননি মালিকপক্ষ। এরপর গত বৃহস্পতিবার এক জরুরি নোটিশে সেপ্টেম্বরের বেতন ৭ নভেম্বর এবং অক্টোবর মাসের বেতন ২৮ নভেম্বর পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু ৭ নভেম্বরও বেতন পাননি শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, আমরা তাদের একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা দাবি আদায় না করে সড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন।
তবে টিএজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানাটি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। তাই এ বিষয়ে তাদের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।