‘অভিযোগ ভিত্তিহীন, বানোয়াট’: বিএনপির শোকজ নোটিশের জবাবে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী দলের দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের [শোকজ] জবাবে, তার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন'ও 'বানোয়াট' বলে উল্লেখ করেছেন।
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, ''এলাকায় দলমত নির্বিশেষে ধনী ব্যবসায়ীর তালিকা করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়। ওমান বসবাসরত সিআইপি ব্যবসায়ী ইয়াসিন এর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি, চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইয়াসিনের রাউজানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া। সিআইপি ব্যবসায়ী মো. ফোরকানের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফোরকানকে নির্মম শারীরিক নির্যাতন, আপনার সন্ত্রাসীরা দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থানরত রাউজানের ব্যবসায়ীদের ওপর ঢালাও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকাকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করা ইত্যাদির অভিযোগ জমা হয়েছে।''
এতে আরও বলা হয়, ''স্বঘোষিত কমিটি ঘোষণা করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আপনি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলেন, 'রাউজান কমিটি গঠন করতে কারোর প্রয়োজন নেই, আমার এলাকা আমি করব।' এ ধরনের বক্তব্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রতি চরম অনাস্থা ও ধৃষ্টতা।''
চিঠিতে আরও বলা হয়, ''দীর্ঘ ৬ বছর বিদেশে থেকে নতুন সরকারের শুরুতে দেশে এসে দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে রাউজানে আপনি অস্থিরতা ও মারাত্মক আতঙ্ক তৈরি করেছেন-যা রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ডসহ উত্তরের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সুতরাং আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার যথাযথ কারণ দর্শিয়ে আগামী তিনদিনের মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।''
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর জবাব
শোকজ নোটিশের জবাব হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পাঠানো ৭ নভেম্বরের চিঠির একটি কপি পেয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)।
এতে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ''গত ৫ নভেম্বর ইস্যুকৃত আপনার শোকজ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমি পেয়েছি। বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা সত্ত্বেও উত্তর দিয়ে বাধিত করছি। কথিত আবেদনকারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্ত নোটিশে আমি, আমার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ব্যথিত।''
তিনি বলেন, ''আমি বিগত ১৭ বছর আওয়ামী রোষানলের পরেও দলের হাল ছাড়িনি। সন্ত্রাসীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দলের সব কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে মামলা-হামলার শিকার ও শহিদ নেতাকর্মীদের দাফন-কাফন সম্পন্নসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পাশে ছিলাম।''
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ''সর্বজনস্বীকৃত যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে জিয়া পরিবারের পরে আমার পরিবারই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরপরেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে হৃদয়ে ধারণ করে আছি। পতিত স্বৈরাচার এবং তার দোসররা আমাকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালানোকে তাদের শেষ অস্ত্র মনে করছি। আমি আপনার মাধ্যমে দলের সব নেতাকর্মীকে আহ্বান করব- যেন এ ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সদা সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ থাকে।''
তিনি আরও বলেন, ''আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) হেয়প্রতিপন্ন কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করা কিংবা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কে বা কারা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলের হাইকমান্ডকে আমি কিংবা আমার পরিবারের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করেছে। আমি সম্পূর্ণভাবে জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।''