ক্যাসিনো ক্র্যাকডাউনের ৪ বছর: বিচারে ধীর গতি, জামিনে আসামি, জুয়াও অব্যাহত আছে
রাজধানী ঢাকায় অবৈধ জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোগুলোর বিরুদ্ধে চার বছর ধরে অভিযান চালানো হয়েছে, তবু বিচারকাজে ধীরগতি রয়েই গেছে। বেশিরভাগ মামলা রয়েছে বিচারপূর্ব পর্যায়ে, আসামিদেরও অনেকে জামিন নিয়ে জেলের বাইরে।
কিছু মামলায় দণ্ড নিশ্চিত করা গেলেও – তাতে সার্বিক প্রভাব পড়েছে সামান্যই। যেসব ক্লাবগুলোতে এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে, সেগুলোয় এখন ভিন্ন কৌশলে গোপনে জুয়ার আড্ডা চালু থাকার কথাও জানা যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে এসব মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চায় পুলিশ সদর দফতর। এসময় তদন্তকারীরা জানান, আগের সরকার এবং সিআইডি-সহ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা এসব মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। "কখনো কখনো আমাদের আরও ধীরে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হতো, অন্যদিকে অবাধে ঘুরে বেড়াতো অভিযুক্তরা' - বলেন একজন তদন্ত কর্মকর্তা।
এবিষয়ে কথা বলতে, সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করে টিবিএস। কিন্তু ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি, হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠিয়েও মেলেনি সাড়া।
২০১৯ সালে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট-সহ ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবগুলোয় অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। বেশকিছু ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয় এসময়।
কিন্তু গত চার বছরে মাত্র তিনটি মামলা বিচারিক পর্যায়ে গেছে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ মামলায় রয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এবং অন্তত পাঁচটি মামলার তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি।
অভিযুক্ত এসব নেতাদের অনেকেই পরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসেন, তাদের ব্যাংক হিসাবগুলোও সচল করা হয়। ক্লাবগুলোয় আবারো শুরু হয় অবৈধ কার্যকলাপ, বর্তমানে ক্যাসিনো না থাকলেও – অন্যান্য উপায়ে চলছে জুয়ার লেনদেন।
ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযানের সময় সম্রাটসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ৫২টি মামলা দেওয়া হয়; এরমধ্যে ৪৭টি মামলা এখনো তদন্ত পর্যায়ে। জামিনে মুক্ত রয়েছেন যুবলীগ নেতা সম্রাট এবং তার বিচার এখনো শুরুই হয়নি। এদিকে আরও দুই আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও কাজী আনিসুর রহমানের ব্যাংক হিসাবের অবরোধ আদালতের নির্দেশে প্রত্যাহার করা হয়। এরা দুজনেই ছিলেন ক্যাসিনোকাণ্ডের পর যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত। তারাও জামিনে বাইরে রয়েছেন।
অন্যদিকে ক্যাসিনো সাঈদ বলে পরিচিত এ কে এম মমিনুল হক গ্রেপ্তার এড়াতে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
পাঁচ মামলার তদন্ত কাজ এখনো স্থগিত
সম্রাট ও খালেদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলায় মধ্যে দুটিই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা হয়, যেগুলো এখনো তদন্ত পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক ওরফে আনু, রূপন ভূঁইয়া ও আরেকজনের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের দায়ে আরও তিনটি মামলা করা হয়।
সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিটের পরিদর্শক মেহেদী মাকসুদ সম্রাটের অর্থ পাচার মামলার তদন্ত করছেন। টিবিএসকে তিনি বলেন, 'সম্রাটের আর্থিক বিবরণ চেয়ে আমরা অনেক আগেই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় একটি মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছি। কিন্তু, এখনো কোনো জবাব পাইনি। এবিষয়ে ওই দুই দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আরও তিনবার যোগাযোগ করেছি। এমএলএআর এর জবাব না পাওয়া পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাচ্ছে না।'
সিআইডির পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট হুমায়ূন কবির খালেদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, 'খালেদের আর্থিক বিবরণ চেয়ে আমরা মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বেশ কয়েকটি চিঠি দিয়েছি, যার কোনোটারই উত্তর পাইনি। চিঠির উত্তর পাওয়া মাত্রই আমরা চার্জশিট জমা দেব। প্রথমে আমরা ইংরেজিতে চিঠি দেই, কিন্তু কোনো উত্তর না পাওয়ায়, আমরা আবারো সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে যোগাযোগ করি। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সরকার আমাদের থাই ভাষায় চিঠি পাঠাতে বলেছে। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমরা থাই ভাষায় এমএলএআর পাঠিয়েছি।'
সিআইডির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'এমএলএআরের বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ক্যাসিনোকাণ্ডের অনেক অর্থপাচার মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এই তথ্য কেন সামনে আসছে না সেটা আপনাকে বুঝতে হবে।'
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সম্রাট ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত, ৩৫ বার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেছেন সম্রাট।
সম্রাটের বিচার এখনো শুরু হয়নি
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৈধ আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। অর্থ পাচার মামলা চলাকালে– আরও তিন মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়, তবে এখনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। বর্তমানে এসব চার্জশিট থাকা সত্ত্বেও জামিনে মুক্ত রয়েছেন সম্রাট।
আদালতের সূত্রগুলো জানায়, আইনি প্রক্রিয়ায় সম্রাট বারবার শুনানি পিছিয়েছেন। জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের একটি মামলার শুনানি ছিল গত ২ জুলাই। আসামির অনুরোধের প্রেক্ষিতে, সর্বশেষ এই মামলার শুনানি পিছিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।
সম্রাটকে গ্রেপ্তারের দিনই তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আটক করা হয়। এরপর সম্রাটের কাকরাইলের অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর অবৈধ অস্ত্র, মাদক এবং ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী রাখার অভিযোগেই তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরদিন র্যাব-১ এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে রমনা থাকায় মামলা দায়ের করেন।
২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর, অর্থপাচারের অভিযোগে রমনা থানায় আরেকটি মামলা করে সিআইডি।
এরমধ্যে মাদক ও অস্ত্র মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলার চার্জশিট জমা দেন র্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম। আর ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর অস্ত্র মামলার চার্জশিট জমা দেন র্যাব-১ এর এসআই শেখর চন্দ্র মল্লিক।
সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী জানান, তার মক্কেলের বিদেশ ভ্রমণের কারণে বিভিন্ন সময়ে মামলার শুনানি পেছানোর আবেদন করা হয়, যা আদালত মঞ্জুর করেন। আর বিচারক ছুটিতে থাকায় গত ২ জুলাইয়ের শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছিল।
খালেদের বিরুদ্ধে চারটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অর্থপাচারের দুই মামলাসহ তার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। ওই সময় অবরুদ্ধ করা হয়েছিল তাঁর ব্যাংক হিসাবও।
পাঁচটি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এসব অভিযোগ গঠনের কাজ চলছে, এবং সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে। আর তদন্ত চলছে অর্থ পাচারের একটি মামলায়।
আদালত সূত্র জানায়, খালেদের শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আদালত চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য তার হিসাবগুলোর অবরোধ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
মমিনুলের বিচার এখনো শেষ হয়নি
সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হকের (ক্যাসিনো সাঈদ) বিরুদ্ধে সিআইডি ও দুদকের দায়ের করা তিনটি মামলা রয়েছে।
ক্যাসিনো পরিচালনা, সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজি ও ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরমধ্যে দুটি মামলা চলছে দুই বছর ধরে, তৃতীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি সিআইডি। মমিনুলও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
চার্জশিট অনুযায়ী, মোহামেডান ও আরামবাগ ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন পাঁচ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করতেন মমিনুল। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাবে 'ওয়ান টেন' নামের একটি জুয়াখেলা পরিচালনাও করতেন। সেখান থেকে আয়ের ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা জমা হয় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বৈশাখী এন্টারপ্রাইজের হিসাবে।
আনিসুরের ব্যাংক হিসাব সচল
ক্যাসিনোকাণ্ডের সময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বহির্ভুত উৎস থেকে ১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনে দুদক।
প্রথমে তার ব্যাংক হিসাবগুলো ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। তবে গত বছরের নভেম্বরে সেটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন আদালত।
আনিসুরও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন, এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো চলছে।
জি কে শামীম ও ১৯ জন দোষী সাব্যস্ত
আদালত সূত্রগুলো জানায়, সরকারি প্রকল্পের শীর্ষ ঠিকাদার জি কে শামীম, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সহসভাপতি এনামুল হক ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়সহ ২০ জনকে অর্থ পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন সেলিম প্রধান, বাকি ১৯ জন কারাগারে রয়েছেন।
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের জন্য জি কে শামীমকে ১০ বছরের এবং তার সাত দেহরক্ষীকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। তাদেরকে অস্ত্র আইনে-ও দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। শামীমের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলার বিচারকাজ চলছে।
এনামুল ও রূপনের বিরুদ্ধে ১২ মামলা
২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনের বাড়িতে তল্লাশি চালায় র্যাব। এনামুলের বাসা থেকে নগদ ৮৮ লাখ টাকা ও ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২,৯০৮ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করে র্যাব-৩। আর রূপনের বাড়ি থেকে জব্দ করা হয় নগদ ১৭ লাখ টাকাসহ আড়াই কোটি টাকা মুল্যের স্বর্ণালঙ্কার। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করা হয়।
২০২২ সালের ২৫ এপ্রিলে এনামুল, রূপন ও আরও ১১ জনকে রাজধানীর ওয়ারী থানার একটি অর্থ পাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৪ কোটি টাকা জরিমানায়– দণ্ডিত করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫।
২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর, গেন্ডারিয়া থানার অর্থ পাচারের আরেকটি মামলায় তাদেরকে আরও ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। বাকী ১০টি মামলা এখনো চলছে।
এনামুল ও রূপন দুই ভাই, তাদের মালিকানায় থাকা অন্তত ২২টি ভবন ও ১২১টি ফ্ল্যাট জব্দ করে সিআইডি। সম্প্রতি এসব সম্পত্তির খোঁজখবর নিতে গিয়ে টিবিএসের প্রতিবেদকরা দেখেন, এরমধ্যেই বেশকিছু ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
একজন সিকিউরিটি গার্ড টিবিএসকে বলেন, ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়ার জন্য আদালত ও সিআইডি উভয়ের অনুমতি নিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, "আপনাকে আর বিস্তারিত বলতে পারব না, আপনাকে এই বিল্ডিংয়ে আর ঢুকতে দেব না।"
এবিষয়ে জানতে সিআইডির মিডিয়া কর্মকর্তা ও পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট আজাদ রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, জব্দ করা ফ্ল্যাটগুলো কিভাবে ভাড়া দেওয়া হলো সেবিষয়ে কিছু জানেন না, এনিয়ে আর মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
ক্যাসিনোকাণ্ডে অন্যান্যদের গ্রেপ্তার ও বিচার কার্যক্রম
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মইনুল হক মঞ্জুকে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তারিখে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে অবৈধ অস্ত্র ও বিদেশি মদ পাওয়া যায়। এবিষয়ে দুটি মামলা করা হয় মইনুলের বিরুদ্ধে, যেগুলো বিচারিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যায়ে রয়েছে।
২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ও ঢাকা উত্তরের ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদক রাখার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধেও দুটি মামলা করা হয়।
২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি, অবৈধভাবে ২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি চার্জশিট দেয় দুদক। ২০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সিআইডিও একটি মামলা করে, যা বর্তমানে ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৭ এ বিচারাধীন রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলার কার্যক্রমও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ পর্যায়ে। এরমধ্যেই ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান রাজীব।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সাবেক সভাপতি কাজী শফিকূল আলম ফিরোজ এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াও জামিনে রয়েছেন। তবে কারাগারে রয়েছেন মইনুল হক মঞ্জু এবং এনামুল হক আরমান।
ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতের তৎকালীন সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু দাবি করেন, "ক্যাসিনোকাণ্ডের মামলাগুলো যেসব আদালতে বিচারাধীন— তার প্রতিটিতেই নিজেদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সবসময় সতর্ক ও অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন কৌঁসুলিরা।"
ক্লাবগুলোতে জুয়ার আড্ডা চলছেই
ক্যাসিনোকাণ্ডের চার বছর পরে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হওয়া ক্লাবগুলো আবারো খোলা হয়। লোকজনের আনাগোনা এখন কম, নীরবেই চলছে সেগুলো।
ঢাকার দিলকুশা ক্লাবে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবের গেট দিয়ে কে প্রবেশ করছে সেদিকে খেয়াল রাখছেন কয়েকজন ব্যক্তি। গেট দিয়ে ঢোকামাত্রই টিবিএসের প্রতিবেদককে থামিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তখন সাংবাদিক বলে পরিচয় দিলে– একজন বলেন, এখানে কোনোকিছু হচ্ছে না, তাছাড়া ক্লাবের সংস্কার কাজও এখনো শুরু হয়নি।
আরও বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ করলে – তিনি আর কথা বলতে চাননি। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ আছে উল্লেখ করে, ক্লাবের ভেতরে যেতে তিনি বাধাও দেন।
তখন ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক কারা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকটা ছোট ঘর আছে, সেখানে তারা এসে বসেন।
তবে গোয়েন্দা সূত্র ও বিভিন্ন ভিডিও থেকে জানা যাচ্ছে, এখনো এসব ক্লাবের আড়ালে চলছে অবৈধ জুয়ার আড্ডা।