বাংলাদেশে সরকার পতনের বাস্তবতা ভারত মেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছে: টিআইবি
গণঅভ্যুত্থানে কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের বাস্তবতা মেনে নিতে ভারতীয় সরকার, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে 'নতুন বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের প্রথম ১০০ দিন' শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভারত এখনও বাংলাদেশকে কর্তৃত্ববাদীদের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছে। ভারত সম্পর্কে মানুষের যে লিবারেল ধারণা ছিল, সে ধারণা পাল্টাচ্ছে। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেভাবে বলা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিব্রতকর। ভারতের জন্যও এটি বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। ভারত তার অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।"
আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম তার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপর অর্পিত দায়িত্ব বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সময়মতো নেওয়া হয়নি এবং এখনো এটি অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাড- হক প্রবণতা, উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও দায়িত্ব বণ্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়েছে। প্রশাসন পরিচালনায় সরকারের দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া সিদ্ধান্তেও সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরিবর্তনও করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি এখনো চলমান রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও আরেকটি গোষ্ঠীর কাছে প্রতিস্থাপন বা হাতবদল হচ্ছে মাত্র। কর্তৃত্ববাদ পতনের ক্ষেত্রে আন্দোলন ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে ঘাটতি রয়েছে। আর রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যে সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার প্রশ্নে ধৈর্যের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
এদিকে ভারত কর্তৃত্ববাদ পতনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে ভুল স্বীকারে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপড়েন চলছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, রাষ্ট্র সংস্কারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসহ আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সৃষ্টি না করে চট করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে আন্দোলনের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হবে।