ডায়াপার, ওষুধ ও শিশুখাদ্য মজুতের পরামর্শ: নাগরিকদের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিয়ে নর্ডিক দেশগুলোর নির্দেশনা
উত্তর ইউরোপের নর্ডিক দেশগুলো যুদ্ধ কিংবা সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নাগরিকদের জন্য প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ক নির্দেশিকা প্রকাশ করছে। খবর বিবিসি ও সিএনএন'র।
সুইডেনের জনগণ সোমবার (১৮ নভেম্বর) থেকে হাতে পাবে 'ইন কেস অব ক্রাইসিস অর ওয়ার' শিরোনামের একটি হালনাগাদ পুস্তিকা। ন্যাটো জোটে সদ্য যুক্ত হওয়া ফিনল্যান্ড এবং নরওয়েও তাদের জনগণকে সামরিক সংঘাত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং চরম আবহাওয়ার মতো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়ে তাদের নিজস্ব নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুতের কথা বলা হয়েছে।
সুইডেন সরকারের "ওম ক্রিসেন এলার ক্রিগেট কমার" (যদি সংকট বা যুদ্ধ আসে) শীর্ষক পুস্তিকাটি ১৮ নভেম্বর থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশটির ৫০ লাখ বাড়িতে বিতরণ করা হবে। সুইডিশ সিভিল কন্টিনজেন্সি এজেন্সি (এমএসবি) এই পুস্তিকাটি প্রস্তুত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম প্রকাশিত এই পুস্তিকার এটি পঞ্চম সংস্করণ। এবারের সংস্করণে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির ওপর আরও বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
এমএসবি জানিয়েছে, অক্টোবর মাসে পুস্তিকার ডিজিটাল সংস্করণ প্রায় ৫৫ হাজার বার ডাউনলোড হয়েছে। তাদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে অবনতি ঘটেছে। ইউরোপে যুদ্ধ, চরম আবহাওয়া, সন্ত্রাসী হুমকি, সাইবার আক্রমণ এবং ভুয়া তথ্য প্রচারের মতো সমস্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন সংস্করণে সংকটের সময় রক্তপাত বন্ধ করার উপায়, প্রাণী নিয়ে প্রস্তুতি, শিশুদের সঙ্গে যুদ্ধকালীন আলোচনা, এবং বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সহায়তার নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফিনল্যান্ড সম্প্রতি তাদের নিজস্ব নির্দেশিকা 'প্রিপেয়ারিং ফর ইনসিডেন্টস অ্যান্ড ক্রাইসিস' অনলাইনে প্রকাশ করেছে। নরওয়ের জনগণও পেয়েছে একটি পুস্তিকা, যেখানে চরম আবহাওয়া, যুদ্ধ এবং অন্যান্য হুমকির সময়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কীভাবে স্বনির্ভর থাকা যাবে তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, গ্রীষ্মে ডেনমার্কের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের ই-মেইলে তিন দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি, খাবার এবং ওষুধের তালিকা পাঠিয়েছে।
ফিনল্যান্ডের ডিজিটাল নির্দেশিকায় সামরিক সংঘাত নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। সশস্ত্র আক্রমণের ক্ষেত্রে দেশটির সরকার ও প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে জোর দেওয়া হয়েছে যে, ফিনল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ আত্মরক্ষায় 'ভালোভাবে প্রস্তুত'।
গোথেনবার্গে অধ্যয়নরত ২৪ বছর বয়সী ফিনিশ শিক্ষার্থী মেলিসা এভে আজোসমাকি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় তিনি বেশি আতঙ্কিত ছিলেন। "এখন একটু কম ভয় পাই, তবে যুদ্ধ হলে কী করব, সে চিন্তা মাথায় থাকে। বিশেষ করে, আমার পরিবার ফিনল্যান্ডে থাকায় বিষয়টি আমাকে বেশি ভাবায়।"
এছাড়া, নরওয়েতে প্রতিটি পরিবারে একটি করে, অন্তত ২২ লাখ পেপার কপি বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে ঘরে রাখার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকায় রয়েছে; দুর্যোগকালীন খাবার যেমন- টিনজাত খাবার, এনার্জি বার এবং পাস্তা, পাশাপাশি জরুরি ওষুধ, যেমন-আইোডিন ট্যাবলেট। ২০১৮ সালেও একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং বন্যা ও ভূমিধসের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ায় নতুন নির্দেশনা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।
ফিনল্যান্ড বরাবরই সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তের কারণে প্রতিরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। তবে সুইডেন সাম্প্রতিক বছর পর্যন্ত তাদের প্রতিরক্ষা অবকাঠামো কমিয়ে রেখেছিল এবং এখন তা পুনর্গঠনে মনোযোগ দিয়েছে।
সুইডেনের সিভিল ডিফেন্স মন্ত্রী কার্ল-অস্কার বোহলিন বলেন, "বিশ্ব পরিস্থিতি পরিবর্তিত হওয়ায় সুইডিশ পরিবারগুলোকে দেওয়া তথ্যেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে"। তিনি এবছর আরও সতর্ক করেছিলেন যে, 'সুইডেনে যুদ্ধ হতে পারে,' যা অনেকের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে।