প্রেসক্লাবে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রতিবাদী সমাবেশ, সড়কে চলাচলের অনুমতি দাবি
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। সেইসঙ্গে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নসহ অতিবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নীতিমালা বাস্তাবায়ন করার দাবি জানায় সংগঠনটি।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।
রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জালাল আহমেদ বলেন, 'সারা দেশে ৫০ লাখ মানুষ ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবহানে যুক্ত রয়েছেন। কিস্তি করে, জমি বন্ধক রেখে, পুলিশি নির্যাতন, অবৈধ চাঁদাবাজি মোকাবিলা করে ৫০ লাখ মানুষ বছরে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার অবদান রাখছেন। তারা কোনো প্রণোদনা বা সরকারি সহায়তা ছাড়াই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এই ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা হলে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাই অতি দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পুনর্বিবেচনা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিতে হবে।'
সমাবেশে সংঠনের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, 'গত তিনদিন যাবত যে দৃশ্যগুলো আমরা দেখছি, সেখানে নানাভাবে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'গত ১২ বছর ধরে আমরা বলে আসছি ব্যাটারিচালিত রিকশনা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেন। সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বলেছি। কারও পেটে লাথি মেরে কারও জীবিকা নষ্ট করে কোনো রিট হয় না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এটা উস্কানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের দাবি, নীতিমালা বাস্তবায়ন চাই অনতিবিলম্বে। সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে, মন্ত্রিপরিষদের রায় আছে। তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে আজ কেন নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে?'
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সাত দফা দাবি
১. নীতিমালা অনুযায়ী ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেওয়া।
২. কারিগরি ত্রুটি সংশোধন করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন করা।
৩. ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশাসহ নিহত-আহত সব শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৪. বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয় বন্ধ করতে ইলেকট্রিক বা ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা।
৫. প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত, স্বল্প গতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড/বাই লেন নির্মাণ করে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা নিরসন করা।
৬. ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক জব্দ বন্ধ করা এবং জব্দকৃত গাড়ি ও ব্যাটারি ফেরত দেয়া।
৭. সব শ্রমিকের জন্য আর্মি রেটে রেশন ও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) হাইকোর্ট তিন দিনের মধ্যে রাজধানীর রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন।
সেদিন রাতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসানা করিম একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় নিহত হন। এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
এদিকে বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এই বিক্ষোভ মহাখালী, মিরপুরসহ শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা মহাখালী লেভেল ক্রসিং অবরোধ করেন। ফলে ঢাকা ও দেশের অধিকাংশ এলাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ যৌথভাবে বিক্ষোভকারীদের রেলপথ থেকে সরিয়ে দিতে অভিযান চালায়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং আশপাশের কিছু যানবাহন, ভবন ও স্থাপনা ভাঙচুর করেন।
পরে বিক্ষোভকারীরা শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল (২২ নভেম্বর) তারা আবারও বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ করেছেন।