অজ্ঞাত দাতার সাহায্যে হাসপাতালের বিল পরিশোধ, বাড়ি ফিরছে নুহা-নাবা
আড়াই বছরের বেশি সময় হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হয়ে সোমবার বাড়ি ফিরছে দেশের প্রথম সফল অপারেশন হওয়া মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো যমজ শিশু নুহা-নাবা।
শুরুতে ফ্রিতে চিকিৎসার কথা থাকলেও, পরে কেবিন ভাড়া ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করা নিয়ে জটিলতা হওয়ায়; সুস্থ হওয়ার পরও বাড়ি ফিরতে পারছিল না নুহা-নাবা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মো. শাহিনুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'নুহা-নাবার কেবিন ভাড়া বাবদ একটি বড় অংশের টাকা দান করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। বাকি টাকার কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেবো, রোগী দুজনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান বলেন, 'নুহা ও নাবার চিকিৎসা বাবদ ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- কেবিন ভাড়া, হাসপাতাল ফার্মেসির থেকে ওষুধ কেনার খরচ, অপারেশনকালীন নিউরোসার্জারি বিভাগের করা ওষুদ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদী ব্যয়, অ্যানেস্থেশিয়া সামগ্রী ও অপারেশন বা ওটি চার্জ ইত্যাদি। এই ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বহন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ, আর ১৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। অনুদানকারী তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে এই অনুদান পেতে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সাংবাদিক তাওসিয়া তাজমিম এবং পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক চৌধুরী খালেদ মাসুদ। অর্থাৎ জোড়া লাগানো যমজ শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।'
তিনি আরও বলেন, 'নুহা ও নাবাকে ডিসচার্জ দেয়া হলেও চিকিৎসার জন্য ফলোআপে থাকতে হবে এবং আরও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।'
নুহা-নাবার বাবা আলমগীর রানা টিবিএসকে বলেন, 'রোববার বিকাল ৩টায় ভিসি স্যার ও অন্যান্যরা আমাদের কেবিনে এসে ছুটির কাগজ দিয়েছেন। আমাদের আজই চলে যেতে বলেছে। তবে আমাদের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি না থাকায় আমরা সময় চেয়েছি, আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে আমরা চলে যাব।'
তিনি আরও বলেন, 'এক মাস পর নুহা-নাবাকে ফলোআপের জন্য আসতে হবে। ওদের আরেকটি সার্জারি বাকি আছে। ৬ মাস পর ওই সার্জারি হবে। পরের সার্জারিটাও ফ্রিতে করে দেওয়ার জন্য আমি ভিসি স্যারকে অনুরোধ করেছি, তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।'
২০২২ সালের ২১ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি ক্লিনিকে নুহা ও নাবার জন্ম হয়। ওই বছর ৪ এপ্রিল তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রেফার করা হয় এবং ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম সার্জারি হয়। তারপর থেকে তাদের আটটি সার্জারি হয়েছে।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নুহা-নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বিএসএমএম থেকে নুহা-নাবার বাবার কাছ থেকে কেবিন ভাড়া চাওয়া হয়।
কেবিন ভাড়া নিয়ে জটিলতায় বাড়ি ফিরতে পারছিলোন নুবা-নাবা।
এই যমজদের বাবা আলমগীর একজন পরিবহন শ্রমিক। তার মেয়েদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় থাকা অবস্থায় তিনি চাকরি হারিয়েছেন।