সময়ের সবচেয়ে বিতর্কিত মন্ত্রিসভা গঠনে ট্রাম্পকে সাহায্য করছেন ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সংক্ষেপে ডন জুনিয়র নতুন প্রশাসনের মন্ত্রিসভা গঠনে ট্রাম্প পরিবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তুলনামূলকভাবে কম অভিজ্ঞ হলেও অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের শীর্ষ পদে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। যদিও অনেকে দাবি করছেন এ মন্ত্রিসভা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত মন্ত্রিসভা হতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বরাবরই পরিবারের সদস্যদের ওপর রাজনৈতিক পরামর্শের জন্য নির্ভর করেন। এবার তার পাশে রয়েছেন বড় ছেলে ডন জুনিয়র। মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি সিনেটর জেডি ভ্যান্সকে ট্রাম্পের রানিং মেট হিসেবে সুপারিশ করেছেন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করেছেন।
ডোনাল্ড জুনিয়র শিগগিরই '১৭৮৯ ক্যাপিটাল' নামের একটি কনজারভেটিভ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তবে, তিনি তার রাজনৈতিক পডকাস্ট চালিয়ে যাওয়া এবং ট্রাম্পের মতাদর্শ অনুসরণকারী প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন একটি সূত্র। এছাড়া তিনি হোয়াইট হাউসে তার বাবাকে পরামর্শ দেবেন, যদিও তিনি প্রশাসনের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত থাকবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ডন জুনিয়র ও ট্রাম্প-ভ্যান্স ট্রানজিশন টিম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এছাড়া ডন জুনিয়র তার বাবার জন্য প্রার্থীদের নির্বাচনে বিশ্বস্ত এবং বিশ্বের প্রতি প্রতিষ্ঠা-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ করে সুরক্ষাবাদী অর্থনীতি, সামরিক হস্তক্ষেপ হ্রাস ও বিদেশি সহায়তা কমানোর মতো মনোভাব নিয়ে চলেন, তাদের ওপর গুরুত্ব দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডন জুনিয়রের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স এবং বিভিন্ন জনসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে এই দৃষ্টিভঙ্গিই স্পষ্ট হয়েছে।
তবে তার পছন্দ করা প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। যেমন, রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র এবং তুলসী গ্যাবার্ডকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে সিনেটে কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেনেডি একজন পরিবেশবাদী কর্মী হলেও ভ্যাকসিন বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য সমালোচিত। অন্যদিকে, গ্যাবার্ড একসময় ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসওমেন ছিলেন। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের যৌক্তিকতা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন এবং ২০১৭ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন।
ক্ষেত্রে বিশেষে প্রভাবশালী
ডন জুনিয়র তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেডি ভ্যান্সকে রানিং মেট হিসেবে নির্বাচিত করতে তার বাবাকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও ভ্যান্সের কিছু নীতিমালা এবং অতীত মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, তবুও ট্রাম্প তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। এটি জুনিয়রের রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
তবে, সব ক্ষেত্রেই তার প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তার বন্ধু এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত রিক গ্রেনেলকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সেনেটর মার্কো রুবিওকে এই পদে মনোনীত করেন, যার দৃষ্টিভঙ্গি ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে তুলনামূলক ঐতিহ্যবাহী বলে বিবেচিত।
সূত্র জানিয়েছে, ডোনাল্ড জুনিয়র সব নিয়োগে সরাসরি যুক্ত নন। নিম্নস্তরের পদগুলোর জন্য প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা নেই। এ বিষয়ে ডন জুনিয়র বলেছিলেন, "এবার আমরা জানি কী করতে হবে। আমার বাবাকে দক্ষ এবং বিশ্বস্ত মানুষদের দিয়ে ঘিরে রাখা হচ্ছে।"
বোনের পথ অনুসরণ
ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা এবং জামাতা জারেড কুশনার ২০১৬ সালের প্রচারণা এবং প্রথম মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এবার তাদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত ছিল।
কুশনার জানিয়েছেন, তিনি নতুন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলো সম্পর্কে অবহিত করছেন। এক মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি বলেন, "আমি উইটকফকে মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত ট্রাম্পের আগের উদ্যোগগুলো বুঝতে সাহায্য করছি।"
কুশনার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে জড়িত থাকতে পারেন। তার লক্ষ্য হলো আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। কুশনার এই চুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তবে ইভাঙ্কা, কুশনার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেক ছেলে এরিক ট্রাম্প (যিনি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ব্যবসা পরিচালনা করেন) নতুন প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন না।
এছাড়া ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এবার আগের মতো পরিবারের ওপর এতটা নির্ভর করছেন না ট্রাম্প। তার পরিবর্তে সুসি ওয়াইলসের মতো দক্ষ সহযোগীদের ওপর আস্থা রাখছেন। কারণ এবারের নির্বাচনে সুসি ওয়াইলস ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাকে সুশৃঙ্খল ও সংগঠিত করেছেন।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনের অন্যতম ক্ষমতাবান পদ চিফ অফ স্টাফ হিসেবে ওয়াইলসকে নিয়োগ দিয়েছেন।
এক সূত্র জানিয়েছে, "এবার সবকিছু অনেক বেশি গোছানো। তাই আগের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার পরিবারের সদস্যদের পরামর্শের প্রয়োজন পড়বে না।"