আদানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: ভারতের পার্লামেন্টের অধিবেশন উত্তপ্ত, বন্ডের দামে ধস
ঘুষ প্রদানের অভিযোগে, আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে অধিবেশনে আলোচনার দাবিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে ভারতের পার্লামেন্টে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর– ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও আদানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলোর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুঁজিবাজারে আদানির শেয়ারে লগ্নীকারী থেকে শুরু করে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এই অবস্থায় শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই আদানি ইস্যুতে উত্তপ্ত হলো পার্লামেন্ট।
আদানি, মণিপুর থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের সম্ভল- এমন নানান ইস্যুতে হট্টগোলের মধ্যে মুলতবি করা হয় অধিবেশন।
নরেন্দ্র মোদির সাথে গৌতম আদানি তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য যেমন সুপরিচিত, তেমনি একই কারণে তিনি বিতর্কিত এক ব্যবসায়ী নিজ দেশেই। ভারতে বিজেপি-বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি কাজের বিনিময়ে বিজেপিকে অর্থায়ন করেন গৌতম আদানির মতো কিছু উদ্যোগপতি। এই অবস্থায়, গত সোমবার ভারতের বিরোধী দলগুলো জানায়, সোমবারে (২৫ নভেম্বরের) শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই তারা আদানির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করবেন।
পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রাক্বালে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে সামাজিক মাধ্যম 'এক্স' (সাবেক টুইটার) এ করা এক পোস্টে লেখেন, 'অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্র– সরকারি দলের উচিৎ আদানি কাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া। কারণ এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।'
তিনি বলেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটেরও একই দাবি, কারণ আদানিতে বিনিয়োগ করা ভারতের শত শত ছোট বিনিয়োগকারীদের কষ্টার্জিত বিনিয়োগও এখন হুমকির সম্মুখীন।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখড় বলেছেন, আদানিকে নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে আইনপ্রণেতাদের থেকে ১৩টি নোটিশ পেয়েছেন তিনি। তবে তাঁরা নিয়ম মেনে না চলার কারণে তিনি তাঁদের অনুমতি দিতে পারেননি।
অবশ্য তিনি কংগ্রেস সভাপতিকে এবিষয়ে বক্তব্য প্রদানের অনুমতি দেন, কিন্তু এসময়ে অন্য আইনপ্রণেতারাও এবিষয়ে কথা বলার দাবি জানাতে থাকেন। এতে বাধা পড়ে খার্গের বক্তব্যে। তুমুল হট্টগোলের এক পর্যায়ে এক ঘণ্টার জন্য রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। এরপর নানা ইস্যু নিয়ে বাকবিতণ্ডায় উত্তাপ সৃষ্টি হলে আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় উচ্চকক্ষের অধিবেশন।
এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল কৌঁসুলিরা গৌতম আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীকে ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। লাভজনক বিদ্যুৎচুক্তি পেতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সাড়ে ২৬ কোটি (২৬৫ মিলিয়ন) ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা হয়। এরপরই গৌতম আদানি ও তার ভাতিজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
কৌঁসুলিরা বলছেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে গৌতম আদানি ও সাগর আদানিসহ মামলার সাত অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিলেন, যে প্রকল্প থেকে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলার মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ঘুষের বিনিময়ে তাদের ভারতের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজও দিতে চাওয়া হয়েছিল।
২০২৩ সালেই এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত শুরু করেছে, তা জানার পরেও আদানির বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগও এনেছেন মার্কিন কৌঁসুলিরা।
এদিকে এশিয়ার পুঁজিবাজারের আজকের লেনদেনে আদানি গ্রুপের আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের বন্ডের দাম ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
২০২৭ সালে মেয়াদোর্ত্তীণ হবে আদানি পোর্টের এমন বন্ডের দাম কমেছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৮৮.৯৮ সেন্ট। গত সপ্তাহের পর থেকে প্রায় ৭ সেন্ট দাম কমেছে বন্ডটির।
আদানি পোর্টের আরও দীর্ঘমেয়াদি বন্ডগুলো সোমবার ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে।
অন্যদিকে আদানি ট্রান্সমিশন কোম্পানির ২০৩৬ সালে মেয়াদি বন্ডের দরপতন হয়েছে ১.৮ শতাংশ।
মার্কিন আদালতের সমন জারির পর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজেসের বাজারমূল্য কমেছে ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার।