আদানি গ্রুপে নতুন কোনো বিনিয়োগ করবে না জ্বালানিখাতের জায়ান্ট টোটালএনার্জি
ভারতের আদানি গ্রুপে তাদের নতুন বিনিয়োগ স্থগিত করেছে ফ্রান্স-ভিত্তিক জ্বালানিখাতের জায়ান্ট টোটালএনার্জি। আদানির বিরুদ্ধে লাভজনক বিদ্যুৎ চুক্তি পেতে ভারতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদানের অভিযোগ ওঠার পর এ সিদ্ধান্ত নিল টোটাল।
আদানি শিল্পগোষ্ঠীর জ্বালানি কোম্পানি – আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড এর সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির জন্য এই ঘুষ প্রদানের অভিযোগ আনেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কৌঁসুলিরা। এরপরে আদানির চেয়ারম্যান গৌতম আদানিসহ সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। এ মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আদানি গ্রিন এনার্জিতে – টোটালএনার্জির ২০ শতাংশের মতো শেয়ার বা মালিকানা রয়েছে। অংশীদার হওয়ায় তারা বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ বাবদ অর্থ প্রদান করছিল আদানিকে, যা এখন বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) টোটালএনার্জি এক বিবৃতিতে বলেছে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও তার পরিণাম সম্পর্কে যতক্ষণ না একটি পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত টোটালএনার্জিস আদানি গ্রুপের কোম্পানিতে কোনো আর্থিক বিনিয়োগ করবে না।
এই চুক্তি সম্পর্কিত দুর্নীতির বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করা হয়নি বলেও দাবি করেছে টোটাল। কোম্পানিটি জানায়, "দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির (আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড) বিরুদ্ধে যে (যুক্তরাষ্ট্রে) তদন্ত হচ্ছে— আমাদের সেসম্পর্কে জানানো হয়নি।"
এদিকে টোটালএনার্জি বিবৃতি দেওয়ার পরে সোমবারের লেনদেনে আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দামে ১১ শতাংশ ধস নামে, পরে তা কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও– কার্যদিবসের শুরুতে যা ছিল তাঁর চেয়ে ৭.৯ শতাংশ কমই রয়ে যায়। টোটালের বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য জানতে আদানি গ্রিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বার্তাসংস্থা রয়টার্স, তবে কোম্পানিটি তাতে সাড়া দেয়নি।
এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল কৌঁসুলিরা গৌতম আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীকে ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। লাভজনক বিদ্যুৎচুক্তি পেতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সাড়ে ২৬ কোটি (২৬৫ মিলিয়ন) ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা হয়। এরপরই গৌতম আদানি ও তার ভাতিজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
কৌঁসুলিরা বলছেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে গৌতম আদানি ও সাগর আদানিসহ মামলার সাত অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিলেন, যে প্রকল্প থেকে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলার মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ঘুষের বিনিময়ে তাদের ভারতের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজও দিতে চাওয়া হয়েছিল।
২০২৩ সালেই এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত শুরু করেছে, তা জানার পরেও আদানির বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগও এনেছেন মার্কিন কৌঁসুলিরা।
এদিকে এশিয়ার পুঁজিবাজারের আজকের লেনদেনে আদানি গ্রুপের আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের বন্ডের দাম ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
২০২৭ সালে মেয়াদোর্ত্তীণ হবে আদানি পোর্টের এমন বন্ডের দাম কমেছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৮৮.৯৮ সেন্ট। গত সপ্তাহের পর থেকে প্রায় ৭ সেন্ট দাম কমেছে বন্ডটির।
আদানি পোর্টের আরও দীর্ঘমেয়াদি বন্ডগুলো সোমবার ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে।
অন্যদিকে আদানি ট্রান্সমিশন কোম্পানির ২০৩৬ সালে মেয়াদি বন্ডের দরপতন হয়েছে ১.৮ শতাংশ।
মার্কিন আদালতের সমন জারির পর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজেসের বাজারমূল্য কমেছে ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার।