দুই চোখ কোথায় গেল, এখনো প্রশ্ন শাহজালালের
২০১৭ সালের ১৮ জুলাই শাহজালাল খুলনা মহানগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুর বাড়ি থেকে রাত ৮টায় মেয়ে শিশু দুধ কেনার জন্য বাসার পাশে দোকানে যান। এ সময় খালিশপুর থানা পুলিশ ওসি নাসিম খানের নির্দেশে তাকে থানায় ডেকে নেয়।
কিন্তু পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে ওসি তাকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহজালালকে পুলিশের গাড়িতে করে বাইরে নিয়ে যায়।
পরদিন ১৯ জুলাই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার দুটি চোখ উপড়ানো অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। তার দুই চোখ হারানোর যন্ত্রণাদায়ক ও লোমহর্ষক সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহজালাল প্রশ্ন ছুড়ে দেন- তার চোখ দুটি গেল কোথায়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার' খুলনা ইউনিটের উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও র্যালির আয়োজন করা হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন হাসিনা সরকারের সময় গুমের শিকার এবং পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার একাধিক পরিবার।
এসময় পরিবারের সদস্যরা কেউ প্রিয় সন্তান ও ভাইকে ফেরত চান। কেউ কেউ তুলে ধরেন শাহজালালের মত নিজের নির্যাতনের কথা।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। বিশেষ করে 'আয়না ঘর' নামক কথিত বন্দিশালার নায়ক এবং হেফাজতে নির্যাতন ও গুমের সঙ্গে জড়িতরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান স্বজনরা।
এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের খুলনার ফোকাল পার্সন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মুহাম্মদ নূরুজ্জামান।
সমাবেশে বলা হয়, হাসিনা সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমন করতে হাসিনা সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ক্ষমতাসীনদলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে। এতে শিশুসহ ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত, ১৮ হাজার আহত এবং ৫৫০ জনের চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
এমনকি মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার' মানবাধিকার সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়েও হাসিনার শাসনামলে চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও হয়রানির সম্মুখীন হয়। তাছাড়া ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে বিভিন্নভাবে এই অভ্যুত্থানকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় রত হয়েছে বলে জানানো হয়।