১০ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হার বাংলাদেশের
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তানজিম হাসান সাকিবের রেকর্ড জুটিতে বিপর্যয় সামাল দিলেও বাংলাদেশ জানতো, এমন সংগ্রহ নিয়ে ম্যাচ জেতা কঠিন কাজ। আর জিতলে হলে বল হাতে করতে হবে দারুণ কিছু। কিন্তু গড়পড়তা বোলিংয়ের সঙ্গে মিস ফিল্ডিং ও ক্যাচ মিসে জয়ের সামান্যতম সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। এভিন লুইস, ব্র্যান্ডন কিং, কেসি কার্টির ব্যাটে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওয়ানডে সিরিজ হারের হতাশা সঙ্গী হলো বাংলাদেশের।
মঙ্গলবার সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ১১ ওয়ানডে পর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হার মানা দলটি আজও তেমন লড়াইও করতে পারলো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ বছর পর ওয়ানডেতে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ, সর্বশেষ হেরেছিল ২০১৪ সালে। এরপর দুবার সফরকারী হয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ক্যারবীয়দের বিপক্ষে এটা তাদের ষষ্ঠ সিরিজ হার।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ অগোছালো শুরুর পর রীতিমতো তালগোল পাঁকিয়ে ফেলে। নিয়মিত ধারায় উইকেট হারিয়ে যেতে থাকে তারা। এর মাঝে একমাত্র ব্যতিক্রম তানজিদ হাসান তামিম। কিন্তু তার লড়াই যথেষ্ট ছিল না। অষ্টম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তানজিম হাসান সাকিব।
তাদের লড়াইয়ের পরও অবশ্য ৫০ ওভার খেলতে পারেনি মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ৪৫.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। এই রান তুলে সেন্ট কিটসে কখনও কোনো দল জেতেনি। লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে অনেকটা পথ এগিয়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ লুইস, কিং ও কার্টির ব্যাটে ৩৬.৫ ওভারেই জয় তুলে নেয়। ৭৯ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ঘরের মাঠের দলটি।
জয়ের লক্ষ্যে সাবধানী শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশেষ করে লুইস খুবই ধীর গতিতে রান তুলতে থাকেন। এরপরও স্বাগতিকদের রানচাকা চালু থাকে অসাধারণ ইনিংস খেলা ব্র্যান্ডন কিংয়ের কারণে। ডানহাতি এই ওপেনার একাই রান তোলার দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রান তোলায় মন লাগান লুইসও। সাবলীল ব্যাটিংয়ে এ দুজন দলকে উড়ন্ত দারুণ সূচনা এনে দেন।
উদ্বোধনী জুটিতে ১২১ বলে ১০৯ রানের জুটি গড়েন কিং-লুইস। নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে লুইসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। এর আগে ৬২ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৯ রান করেন ক্যারিবীয় বাঁহাতি এই ওপেনার। উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের পথে উঠে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিং ও কেসি কার্টির ব্যাটে একই ছন্দে এগিয়ে যেতে থাকে।
দ্বিতীয় উইকেটে এ দুজন যোগ করেন ৪৮ বলে ৬৬ রান। জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার তখন ৫৩ রান, এমন সময় স্টাম্প উপড়ে কিংকে থামান নাহিদ রানা। ফেরার আগে ৭৬ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮২ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন তিনি। পরের জুটি দীর্ঘ হয়নি তাদের। তৃতীয় উইকেটে ২২ রান যোগ করেন কার্টি ও অধিনায়ক শেই হোপ। আফিফ হোসেন ধ্রুবর শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৭টি চারে ৪৫ রান করেন কার্টি।
চতুর্থ উইকেটে ২২ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন হোপ ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শারফেন রাদারফোর্ড। হোপ ২১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৭ ও রাদারফোর্ড ১৫ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের নাহিদ রানা, রিশাদ হোসেন ও আফিফ হোসেন একটি করে উইকেট নেন। বাকি দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাড়ে সাতেরও বেশি ইকোনমিতে রান খরচা করে উইকেটশূন্য থাকেন। কৃপণ বোলিং করলেও মিরাজ উইকেট পাননি।
আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডের মতো আজও ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল। সৌম্য সরকারকে এক পাশে রেখে দাপুটে শুরু করেন তানজিদ। কিন্তু সঙ্গীর ব্যর্থতায় আজও তিনি দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। আগের ওয়ানডেতে ১৯ রান করা সৌম্য ৫ বলে ২ রান করে মিড অনে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন।
দলীয় ২৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ শুরুর এই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ১০০ রানের মধ্যে আরও ৪টি উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় তারা। একে একে ফিরে যান লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিদ হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। এদের মধ্যে কেবল তানজিদ উল্লেখযোগ্য রান করেন।
বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার ৩৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৬ রান করেন। আগের ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বশেষ ২০ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরির দেখা না পাওয়া লিটন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পুল করতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়েন। নিজের ছায়া হয়ে ওঠা ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১৯ বলে ৪ রান করে আউট হন।
মিরাজের আউট ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসকে এলোমেলো করে দেওয়া ক্যারিবীয় পেসার জেডেন সিলসের একটি ডেরিভারি ছাড়তে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ব্যাট চালান তিনি, কোণায় লেগে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। ৫১ বলে ১ রান করেন তিনি। আফিফকে সাবলীল মনে হচ্ছিল। কিন্তু দলীয় স্কোর ১০০ ছোঁয়ার পর থামেন তিনিও। ২৯ বলে ৪টি চারে ২৪ রান করেন আফিফ।
আগের ম্যাচে দারুণ লড়া জাকের আলী অনিক ৯ বলে ৩ রান করে বিদায় নেন একটু পরই। রিশাদ হোসেন ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। ১১৫ রানে ৭ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম। ১০৬ বলে ৯২ রানের জুটি গড়েন তারা। যা অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি, আগের সেরা ছিল ৮৪।
কিছুটা হলেও দলে স্বস্তি ফেরানো তানজিম ৬২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন। দেশের হয়ে ৯টি (আজকের ম্যাচসহ) ওয়ানডে খেলা ডানহাতি এই পেসারের এটাই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এরপর মাহমুদউল্লাহও আর টিকতে পারেননি। ৩১তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৯২ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬২ রান করেন। আগের ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্কোরকার্ডে কিছু রান যোগ করেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসার ৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৫ রান করেন। বাংলাদেশের ৬ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরা হওয়া সিলস ৯ ওভারে ২২ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং তার। ২টি উইকেট পান গুডাকেশ মোটি। একটি করে উইকেট নেন অভিষিক্ত মারকুইনো মাইন্ডলে, রোমারিও শেফার্ড, জাস্টিন গ্রিভস ও রস্টন চেস।