যুব দল পারলেও জাতীয় দল পারে না কেন, পার্থক্য বোঝালেন বুলবুল
বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সব সময়ই সম্ভাবনাময় এক দল। অতীতে আশা জাগিয়ে বারবার ব্যর্থ হলেও বয়সভিত্তিকে সাফল্য মিলতে শুরু করেছে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ। দুই বছর পর জেতে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আসরটিতে অংশ নিয়ে এবারও এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে বাংলাদেশের যুবারা।
বয়সভিত্তিকে আলো ছড়িয়ে পরবর্তীতে জাতীয় দল নামের স্বপ্নের ঠিকানায় জায়গা করে নেন অনেকেই। কিন্তু এই মঞ্চে অনেকেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না, হারিয়ে যান নিমেষেই। অনেকে থিতু হন, কারও আবার জায়গা পোক্ত করতে লেগে যায় অনেক সময়। কিন্তু সব ছাপিয়ে আলোচনার যে জায়গা, জাতীয় দলের হয়ে তাদের জেতা হয় না কিছুই।
দায়টা যে কেবল বয়সভিত্তিক পেরিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া ক্রিকেটারদের, তেমন নয়। এখানে কাঠগড়ায় পুরো জাতীয় দল। যে দলে খেলে থাকেন বয়সভিত্তিক পেরিয়ে আসাসহ ঘরোয়া ক্রিকেট, অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেট খেলে আসা ক্রিকেটাররা। তাদের যৌথ প্রযোজনাতেও মেলে না বলার মতো কিছু। জাতীয় দল এখনও এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ বা আইসিসির কোনো আসরে শিরোপা জিততে পারেনি।
বলাই বাহুল্য, বিশ্বকাপ জেতা এখনও বাংলাদেশের কাছে কল্পনার বিষয়। প্রশ্নটা হচ্ছে, যুবারা পারলেও জাতীয় দল কেন পারে না। এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সমস্যা খুঁজে বের করে সেটার সমাধানও বাতলে দিয়েছেন বর্তমানে আইসিসিতে ডেভেলপমন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত সাবেক এই ক্রিকেটার।
ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে বুলবুল লিখেছেন, 'আমরা গর্বিত, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল এশিয়া কাপ জিতেছে। তারা গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত, সব পূর্ণ সদস্য দলকে হারিয়ে এই অর্জন নিশ্চিত করেছে। এটি একটি বিশাল সাফল্য। অভিনন্দন! আমরা ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও জিতেছিলাম এবং প্রমাণ করেছি যে বাংলাদেশি অনূর্ধ্ব-১৯ দল বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অন্যতম সেরা।'
'কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমাদের সিনিয়র ক্রিকেট দল এখনও কোনো এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ বা বড় কোনো আইসিসি ইভেন্ট জিততে পারেনি। ফাইনালে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। তিন ফরম্যাটেই আমাদের র্যাঙ্কিং গড়ের নিচে। কেন এই বড় ফারাক! এই দুই সাফল্যের মধ্যে যে বড় শূন্যতা, তা পূরণ করার জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন এবং কার্যকর হাই পারফরম্যান্স (HP) প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা। উন্নত দলগুলো যেখানে বিনিয়োগ করছে সঠিক জ্ঞান দিয়ে, আমাদের সেখানে ঘাটতি রয়েছে।'
পোস্টের পরের অংশে পয়েন্ট আকারে সমাধানগুলো উল্লেখ করেন বুলবুল। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান লিখেছেন, 'উদাহরণস্বরূপ- সাপোর্ট স্টাফের উন্নয়ন প্রক্রিয়া, কোচদের প্রশিক্ষণ এবং কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ, ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া, স্পোর্টস সাইয়েন্স এবং মেডিসিনের ব্যবহার, সুবিধাসম্পন্ন অবকাঠামো এবং প্রতিযোগিতামূলক ঘরোয়া ক্রিকেট, সমন্বিত ক্রিকেট বিভাগ; আমাদের এগুলোর প্রতিটির প্রতি ধাপে ধাপে বিনিয়োগ এবং বাস্তবায়ন করা উচিত।'
প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না জানিয়ে তিনি লিখেছেন, 'আমাদের এই বিশ্বমানের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের হেলায় নষ্ট করে দেওয়া যাবে না। হয়তো কথাগুলো শুনতে কঠিন লাগতে পারে, কিন্তু আমাদের অহংকার সরিয়ে সঠিক জ্ঞান এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করতে হবে। অর্থ কোনো সমস্যা নয়; সমস্যা হলো সঠিক পরিকল্পনা এবং সততার অভাব।'
পরিকল্পনা ও সততার অভাবের বিষয়টির পাশাপাশি ব্যাংকে জমানো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অর্থের কথা উল্লেখ করে বুলবুল লিখেছেন, 'যদি আমরা এখনই এগুলো না করি, তাহলে এই সাফল্যের ধারাকে হারিয়ে ফেলব। আর ভবিষ্যতে শুধুই গর্ব করতে হবে যে ব্যাংকে নির্ধারিত আমানতে আমাদের টাকা $ জমা আছে।'