মাহমুদউল্লাহদের উড়িয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে শান্তরা
২ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ থাকলেও ম্যাচ শেষে সেটা নিশ্চয়ই উবে গেছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। তার ব্যাটেই বড় সংগ্রহ পেয়েছিল নাজমুল একাদশ। যে রান তাড়া করতে নেমে অর্ধেক পথও পাড়ি দিতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ একাদশ। দাপুটে এক জয় তুলে নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের চতুর্থ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর দলকে ১৩১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে নাজমুল একাদশ। এ জয়ে ফাইনালের পথে বাকি দুই দলের চেয়ে এগিয়ে থাকল তারা। ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে শান্তর দল। অন্যদিকে পথ কঠিন হলো মাহমুদউল্লাহর দলের। পরের ম্যাচে ১৯ অক্টোবর তামিম একাদশের মুখোমুখি হবে তারা।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে নাজমুল একাদশ। ম্যাচ সেরা ও ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার জেতা আফিফ হোসেনের ৯৮, মুশফিকুর রহিমের ৫২ ও ইরফান শুক্কুরের অপরাজিত ৪৮ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ২৬৪ রান তোলে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। যা চলতি আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
জবাবে শুরু থেকেই উল্টো পথে হাঁটা মাহমুদউল্লাহ একাদশ বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেনি। কোনো ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তাদের একজন ব্যাটসম্যানও হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি। নুরুল হাসান সোহান সর্বোচ্চ ২৭ রানের ইনিংস খেলেন। ৩২.১ ওভারে মাহমুদউল্লাহর দলের ইনিংস শেষ হয় ১৩৩ রানে।
২৬৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা মাহমুদউল্লাহ একাদশের শুরুটা হয় চরম অগোছালো। দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো দলটি নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকে। ১০০ রানের আগেই ৬ জন ব্যাটসম্যান আউট হন। একে একে ফিরে যান ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মাহমুদুল হাসান জয় ও সাব্বির রহমান।
লিটন দাস দারুণ শুরু করেও ২৭ রান করে আউট হন। ১৩ রান করে করেন মুমিনুল ও মাহমুদুল। এরপর নুরুল হাসান সোহানই যা লড়েছেন। মেহেদী হাসান মিরাজকে সাবলীল মনে হয়েছিল। কিন্তু ১৬ রান করেই থামেন তিনি। সঙ্গীর অভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেনননি সোহান। নাজমুল একাদশের নাসুম আহমেদ ও আবু জায়েদ রাহি ৩টি করে উইকেট নেন। ২৬ রানের ২ উইকেট নেন ম্যাচের সেরা বোলার রিশাদ হোসেন।
এরআগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না নাজমুল একাদশেরও। দলীয় ১৩ রানেই ফিরে যান ব্যাট হতে নিজের ছায়া হয়ে ওঠা সৌম্য সরকার। দুই চারে ৮ রান করা সৌম্যর স্টাম্প উপড়ে নেন রুবেল হোসেন। ধীর-স্থির শুরু করা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও টিকতে পারেননি। রুবেলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
বিশ্বজয়ী যুব দলের সদস্য পারভেজ হোসেন ইমনকে সাবলীল মনে হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। দলীয় ৩১ রানে সুমন খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে থামেন তিনি। ফেরার আগে ১৯ রান করেন তরুণ এই বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৩১ রানেই ৩ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন। এই জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামলে নেয় নাজমুল একাদশ। যতো সময় গড়িয়েছে এই দুই ব্যাটসম্যানের রান তোলার গতি ততো বাড়তে থাকে। মুশফিক দেখেশুনে খেললেও আফিফ খেলেছেন ওয়ানডে মেজাজে। এই জুটি থেকে ১৪৭ রান পায় নাজমুল একাদশ।
এই জুটিতে ১৭৮ রানে পৌঁছে যায় দলটি। সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে থাকতে রান আউট হয়ে বিদায় নিতে হয় আফিফকে। ১০৮ বলে ১২টি চার ও একটি ৯৮ রান করেন এই তরুণ তুর্কি। কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন মুশফিকও। আগের ম্যাচে ১০৩ রানের ইনিংস খেলা মুশফিক এদিন ৯২ বলে একটি চারে ৫২ রান করেন।
এরপর নাজমুল একাদশের রানচাকা ঘুরিয়েছেন তৌহিদ হৃদয় ও নিয়মিত রান করে আসা ইরফান শুক্কুর। হৃদয় ২৭ রান করে থামলেও ইরফান ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩১ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংস সাজান শুক্কুর। মাহমুদউল্লাহ একাদশের রুবেল হোসেন ৩টি, এবাদত হোসেন ২টি ও সুমন খান একটি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নাজমুল একাদশ: ২৬৪/৮ (ইমন ১৯, মুশফিক ৫২, আফিফ ৯৮, হৃদয় ২৭, শুক্কুর ৪৮*; রুবেল ৩/৫৩, এবাদত ২/৬০, সুমন ১/৫২)।
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ৩২.১ ওভারে ১৩৩/১০ (লিটন ২৭, মমিুনুল ১৩, মাহমুদুল ১৩, মাহমুদউল্লাহ ১১, সোহান ২৭*, মিরাজ ১৬; নাসুম ৩/২৩, রাহি ২/৩৪, রিশাদ ২/২৬)।
ফল: নাজমুল একাদশ ১৩১ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: আফিফ হোসেন (নাজমুল একাদশ)
সেরা ব্যাটসম্যান: আফিফ হোসেন (নাজমুল একাদশ)
সেরা বোলার: রিশাদ হোসেন (নাজমুল একাদশ)
সেরা ফিল্ডার: নাজমুল হোসেন শান্ত (নাজমুল একাদশ)