দ্রুতই ‘রোডম্যাপ’ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে চায় সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুতই 'রোডম্যাপ' দিয়ে তাদের আস্থা ফেরাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত 'বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং: প্রবাসী বাংলাদেশি ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা পথপ্রদর্শক' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেউ যখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যখন দেখেন, তখন সেখানে কিন্তু সহজে ইনভেস্ট করতে আসতে চান না। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, কারণ আপনার অর্থের যে নিরাপ্ত্তা সেটা আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে। এটা অনস্বীকার্য।
তিনি আরও বলেন, কাজেই এটা আমাদের জন্য কঠিন কাজ সামনে এবং আমরা আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি একটি রোডম্যাপ এসে যাবে। তখন সহজে আস্থা ফিরে আসবে তাদের মাঝে।
তবে রোডম্যাপ কবে নাগাদ আসবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রোডম্যাপ এসে গেলে অনেকেই নিরাপদ বোধ করবেন এবং ইনভেস্ট আসবে। ইনভেস্টমেন্ট না আসলে আমাদের তো চলবে না। কারণ, আমাদের তো বিপুল মানুষ শ্রমবাজারে ঢুকছে। তাদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট সৃষ্টি করতে তো শুধু বিদেশে পাঠিয়েই হবে না, দেশেও বাড়াতে হবে। সেটার জন্য ইনভেস্টমেন্ট লাগবে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য তো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। যত শিগগিরই সম্ভব সেটা আমরা জানি। কাজেই এ লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।
ভারতীয় মিডিয়ার ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার ছড়ানো ভুল তথ্য ও প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) আওয়াজ তুলতে হবে।
তিনি বলেন, "গত চার মাসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে। এগুলোর বিরুদ্ধে দেশের সঠিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এনআরবিদের (প্রবাসী বাংলাদেশি) ভয়েস রেইজ (আওয়াজ তোলা) করে ভূমিকা পালন করতে হবে।"
উপদেষ্টা দাবি করেন, ভারতীয় গণমাধ্যম প্রায়ই বিভিন্ন ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা দেয়, বিশেষত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, "তারা বলছে বাংলাদেশে হিন্দুদের কচুকাটা করা হচ্ছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেসব ঘটনা দেখানো হচ্ছে, তার অধিকাংশেরই সত্যতা নেই। একটি ট্রানজিশন পিরিয়ডে কিছু ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেটি যে হিন্দুদের ওপর হচ্ছে, এমনটা নয়। ১০ টি বাড়িতে আগুন দিলে তার মধ্যে হয়ত ৮টিই মুসলমানদের বাড়ি। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়াগুলো দেখাচ্ছে হিন্দুদের বাড়িতেই আগুন দেওয়া হচ্ছে। উপস্থাপন করা হচ্ছে ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে।"
তিনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক চিত্র উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশের ইমেজ কি সেটা আগে চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের পজিটিভ ইমেজগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। যখন দেখা যায় আমাদের কোনো প্রবাসী বিপুল পরিমাণ অর্থ মালিককে খুঁজে ফেরত দেয়, তখন আমাদের ইমেজ অনেক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যখন দেখা যায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা যাওয়া ও ধরা পড়াদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশি, তখন ইমেজ নিচে নেমে যায়।"
তিনি বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় কর্মশক্তির অভাবের কথা তুলে ধরেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, "সৌদি আরবে ৩২ লাখ প্রবাসী। তাদের মধ্যে ২ লাখ মানুষের সমস্যা থাকে। তাদের সমাধান করার জন্য লোক আছে ২০ জন। আমাদের চাহিদা অনেক, কিন্তু প্রাপ্যতা কম।"