গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত: বিবিসিকে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। আলোচনায় জড়িত একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চুক্তি প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। তিনি জানান, তার প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়ে কাজ করছে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আলোচনা "অগ্রসর পর্যায়ে" রয়েছে। চুক্তি হতে পারে "কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন বা তারও বেশি সময়ের মধ্যে।"
রোববার (১২ জানুয়ারি) বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গেও তার কথা হয়েছে। আল থানি এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করছেন।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, সোমবার হামাস ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা একই ভবনে পরোক্ষ আলোচনা করেছেন।
চুক্তির সম্ভাব্য কিছু বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, "বিস্তারিত প্রযুক্তিগত আলোচনায় অনেক সময় লেগেছে।"
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দিন হামাস তিন বন্দি মুক্তি দেবে। এ বিষয়ে দুই পক্ষই একমত হয়েছে। এরপর ইসরায়েল জনবহুল এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।
সাত দিন পর হামাস আরও চার বন্দি মুক্তি দেবে। এর পর ইসরায়েল দক্ষিণের বাস্তুচ্যুত মানুষদের উত্তরে ফিরতে দেবে। তবে তারা কেবল পায়ে হেঁটে উপকূলীয় সড়ক দিয়ে যেতে পারবে।
গাড়ি, পশুচালিত গাড়ি ও ট্রাক সালাহ আল-দীন সড়কের পাশের একটি প্যাসেজ দিয়ে যেতে পারবে। এই প্যাসেজ কাতার-মিসরের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা দল এক্সরে মেশিনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীকে ফিলাডেলফি করিডরে থাকার এবং পূর্ব ও উত্তর সীমানায় ৮০০ মিটার বাফার জোন বজায় রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই ধাপ ৪২ দিন চলবে।
ইসরায়েল ১ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৯০ জনের শাস্তির মেয়াদ ১৫ বছর বা তার বেশি। এর বিনিময়ে হামাস ৩৪ জন বন্দি মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিনে চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান বন্দির বাবা বিবিসিকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করতে চান যে ইসরায়েল চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। জনাথন ডেকেল-চেন জানিয়েছেন, তার ছেলে সাগুইয়ের জন্য প্রতিদিন তিনি "ভয়ে থাকেন"।
চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগোনোর খবর বাড়তে থাকায়, হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, চুক্তি "এই সপ্তাহেই" হতে পারে, যা বাইডেনের প্রেসিডেন্সির শেষ সপ্তাহ।
এছাড়া, বাইডেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে কথা বলবেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফও দোহায় উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প আগেই হুমকি দিয়েছিলেন, ২০ জানুয়ারি তার দায়িত্ব নেওয়ার আগে বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হলে "চরম পরিস্থিতি" সৃষ্টি হবে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সায়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচনা এগিয়েছে এবং চুক্তি আগের চেয়ে অনেক ভালো মনে হচ্ছে।
তবে এই অগ্রগতি এমন সময় এসেছে যখন নেতানিয়াহু তার শাসক জোটের ভেতর থেকেই প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। ডানপন্থি জোটের ১০ জন সদস্য, যাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি নেতানিয়াহুর নিজ দলের, তাকে চুক্তির বিরোধিতা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
আলোচনার মধ্যেই গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার গাজা শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, "তারা স্কুল, বাড়িঘর এবং এমনকি মানুষের জমায়েতেও বোমা ফেলেছে।"
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব ঘটনার তদন্ত করছে। অন্যদিকে আলাদা বিবৃতিতে জানানো হয়, সোমবার গাজার উত্তরে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু হয়। এই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে গাজায় বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সামরিক অভিযান শুরু করে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় ৯৪ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, যুদ্ধ শুরুর আগেই অপহৃত চারজন ইসরায়েলি নাগরিকের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।