একই শরীরে নারী-পুরুষের প্রজননতন্ত্র, এক সন্তানের ‘মা’, অন্যজনের ‘বাবা’ তিনি
চীনের চংকিং প্রদেশের বিশান কাউন্টির এক নারীর জীবনের গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। বিরল শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই নারীর শরীরে একইসঙ্গে নারী ও পুরুষের প্রজননতন্ত্র বিদ্যমান। জীবনে দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন—প্রথমবার এক পুরুষ, দ্বিতীয়বার এক নারীর সাথে।
দুই সংসার থেকে তার দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। একজন তাকে 'মা' বলে ডাকে, আরেকজন ডাকে 'বাবা'।
৫৯ বছর বয়সী লিউ (ছদ্মনাম), তার পরিচয়পত্র অনুযায়ী তিনি একজন নারী। তবে শৈশব থেকেই তার আচরণ ছিল বেশ আলাদা। তিনি ছোট চুল রাখতে এবং ছেলেদের পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। স্কুলে মেয়েদের টয়লেটে গেলে অনেক সময় তাঁকে ভুল করে ছেলেদের বলে মনে করা হতো।
জন্ম থেকেই লিউ (ছদ্মনাম) নামের এই নারীর আচরণ ছিল অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। ছোট চুল রাখা, ছেলেদের পোশাক পরা—এমন স্বভাবের কারণে শিশুকাল থেকেই তাকে ছেলেদের সঙ্গে তুলনা করা হতো। স্কুলের টয়লেটে গেলে সহপাঠীরা তাকে ভুল করে ছেলেদের টয়লেটে যাওয়ার পরামর্শ দিত।
১৮ বছর বয়সে লিউ একজন পুরুষকে বিয়ে করেন এবং এক বছরের মধ্যেই সন্তানের মা হন। কিন্তু সন্তান জন্মের পর তার শরীরে শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন বৃদ্ধির ফলে তার দাড়ি গজাতে শুরু করে এবং স্তনের আকার ছোট হয়ে যায়। একইসঙ্গে পুরুষের প্রজনন অঙ্গ গঠিত হয়।
এই পরিবর্তন তার প্রথম স্বামী মেনে নিতে না পেরে বিচ্ছেদ চেয়ে বসেন। সন্তানটি বাবার কাছে রেখে লিউ নতুন জীবন শুরু করেন।
বিচ্ছেদের পর লিউ চংকিংয়ের আরেক এলাকায় চলে যান এবং পুরুষ পরিচয়ে জীবনযাপন শুরু করেন। সেখানকার একটি কারখানায় কাজ করার সময় এক নারী সহকর্মী ঝৌ লিউকে ভালোবেসে ফেলেন। লিউ প্রথমে ঝৌর প্রেম প্রত্যাখ্যান করলেও, ঝৌর আন্তরিকতার কাছে পরাজিত হন।
তবে আইনি জটিলতার কারণে তাদের বিয়ে সম্ভব ছিল না, কারণ লিউর পরিচয়পত্রে তিনি এখনও নারী। এ সমস্যার সমাধানে লিউ তার প্রাক্তন স্বামী ট্যাংকে অনুরোধ করেন ঝৌর সঙ্গে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য। এর বিনিময়ে তিনি প্রথম সন্তানের ভরণপোষণের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ঝৌর সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার পর, ঝৌ গর্ভবতী হন এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এভাবেই লিউ একজন ছেলের 'মা' এবং আরেক ছেলের 'বাবা' হয়ে ওঠেন।
২০০৫ সালে প্রথমবার লিউর এই ব্যতিক্রমী জীবন কাহিনি চীনের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। বেশ কিছু ডাক্তার লিউকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রস্তাব দেন, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এখনও লিউ লিঙ্গ পরিবর্তনের কোনো অস্ত্রোপচার করাননি। কারণ হিসেবে তিনি এর খরচের বিষয়টি উল্লেখ করেন। ফলে তার পরিচয়পত্রে আগের লিঙ্গ পরিচয়ই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি তার কাহিনি আবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নতুন করে মানুষের কৌতূহল উদ্রেক করেছে। অনেকেই অবিশ্বাস প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন, 'এটি তো রূপকথার গল্প মনে হচ্ছে!' আরেকজন লিখেছেন, 'তার জীবন কতই না বিচিত্র—একইসঙ্গে নারী এবং পুরুষ, মা এবং বাবা।'