ঢাকার হাসপাতাল সংস্কারে ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পরামর্শ টাস্কফোর্সের
দেশের উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিন্যাস করার লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের সুপারিশ করেছে।
একইসঙ্গে তারা ব্যাপক সংস্কারের জন্য ঢাকার একটি নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতাল নির্বাচন করার পাশপাশি, গ্রামের একটি সরকারি স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে পাইলট প্রকল্প শুরু করার সুপারিশ জানিয়েছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সরকার বৈষম্যহীন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশের উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে ১২-সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে।
ন্যায়সঙ্গত, গতিশীল এবং টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপনের জন্য এই টাস্কফোর্সকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা গেছে, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহেই তা জমা দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স বলেছে, সম্প্রতি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভারতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা মেটাতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে এফডিআইয়ের উদারীকরণ প্রয়োজন।
যদিও অতীতে এ ধরনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন অনেকে– তবে টাস্কফোর্স বলছে, এখন সরকারের উচিত নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হলে, মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাবে; এতে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবেন। একইসাথে, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার খরচও কমবে বাংলাদেশিদের পকেট থেকে।
বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি, টাস্কফোর্স সম্পূর্ণ সংস্কারের জন্য ঢাকার একটি নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতাল নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে। সুপারিশকৃত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে, হাসপাতালে যোগ্য প্রশাসক নিয়োগ এবং একটি নতুন গভর্নিং বোর্ড গঠন করা।
এছাড়া, গ্রাহকদের অভিযোগ সংগ্রহ করতে এবং তরুণ নাগরিক গোষ্ঠীকে অনলাইন-ভিত্তিক সুবিধা দিতে একটি রিয়েল-টাইম মনিটরিং ড্যাশবোর্ড স্থাপনের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। এই সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকরা যে ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন, তার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের কাজ চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে, টাস্কফোর্স গ্রামের একটি সরকারি স্কুল এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সংস্কারের জন্য পাইলট প্রকল্প শুরুর সুপারিশ করেছে। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলো মোকাবেলায় এ উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
এসব সুপারিশের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এমএইচ চৌধুরী লেলিন বলেন, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, "নীতিনির্ধারকরা প্রায়শই ঢাকাকে এমনভাবে ট্রিট করেন যেন এটিই সমগ্র দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা ঢাকার হাসপাতালগুলো সংস্কারের দিকে নজর দিলেও, দেশের বাকি অংশের দিকে নজর দেননা। প্রকৃতপক্ষে, শহরাঞ্চলে গড়ে ৩১ শতাংশ লোকের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেস নেই; নেই কোনো প্রপার রেফারেল সিস্টেম।"
"চিকিৎসার পিছনে ব্যয় করতে গিয়ে প্রতিবছর ৭,০০,০০০ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ মূলত ব্যয়বহুল হাসপাতাল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপকারে আসে না। এসব সমস্যা সমাধানে এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও শক্তিশালী করতে পুরো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিতে হবে," যোগ করেন তিনি।