আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইন লঙ্ঘন ন্যায্য নয়: এইচআরডব্লিউ
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/07/hrw_logo.jpg)
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও, আইন লঙ্ঘন করা ন্যায্য নয়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের আবারও মারাত্মক দমন-পীড়নের দিকে ঝুঁকে পড়া উচিত নয়।
রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকার পারিবারিক বাড়ি, তার কিছু স্বজন ও দলীয় নেতাদের সম্পত্তিও ধ্বংস করেছে। কথিত 'বুলডোজার মিছিল' নামে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় তা শেয়ারও করা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ এসব সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ছয় মাস আগে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে তিনি ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলন দমাতে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে হাসিনার সরকার। ফলে ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
'উচ্ছৃঙ্খল জনতা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছেন' শীর্ষক বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা যখন তার সমর্থকদের উদ্দেশে অনলাইনে বক্তব্য দিতে যাচ্ছিলেন, তার আগে এ ভাঙচুর চালানো হয়। হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার আগে ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে হবে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকার বিচার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির জন্য জবাবদিহির বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষুব্ধ নাগরিকদের কাছ থেকে নানা চাপের মুখে রয়েছে। যার মধ্যে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী কিংবা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বিক্ষোভের মতো চাপও রয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এ সরকার এখনও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে আতঙ্কে থাকা হিন্দুদের সেভাবে আশ্বস্ত করতে পারেনি। বিগত সরকারের সময়ে বেআইনিভাবে মানুষকে আটক রাখার জায়গাগুলো পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রমাণ ধ্বংস করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বর্তমান সরকারের উচিত আগামী মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উত্থাপন করা যাতে কারিগরি সহায়তা, অধিকতর তদন্ত এবং জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদনের অনুরোধ করা যায়।
প্রস্তাবটিতে বিগত সরকারের নির্যাতনের স্বীকৃতি দেওয়া এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত ইতিবাচক মানবাধিকার পদক্ষেপগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ন্যায়বিচার দেখতে চাওয়া জনগণের উচিত জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা, যা সহিংসতা ও প্রতিশোধের পরিবর্তে একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সহায়তা করবে।