ভেটেরিনারি ওষুধের ৭০ শতাংশের যোগান দিচ্ছে স্থানীয় উৎপাদকরা
গাজীপুরের ফুজিলা পোল্ট্রি ফার্মে মুরগি আছে পনের হাজার। এগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সারাবছর যেসব মেডিসিন ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। ডাক্তারের পরামর্শে দেশে উৎপাদন হয় না এমন কিছু আমদানি করা ওষুধ মাঝে মাঝে ব্যবহার করতে হয়।
ফুজিলার মালিক তাইফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিদেশি মেডিসিনের তুলনায় দেশি মেডিসিন দামে সস্তা, গুণগত মান ভালো। দেশে উৎপাদন হয় বলে সেগুলো সহজলভ্যও। এ কারণে দেশি ওষুধেই আমাদের আস্থা বেশি।'
শুধু পোল্ট্রি নয়, গরুর-ছাগলের খামারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেটেরিনারি মেডিসিনের জন্য দেশি কোম্পানিগুলোতেই তাদের আস্থা বেশি।
দেশি গরু খামারের উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম জানান, 'আমি সারাবছর ১৫টি এবং কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৭০-৮০টি করে গরু পালন করি। এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিসিনের বেশিরভাগই দেশে উৎপাদিত।'
অ্যানিমাল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এএইচসিএবি) জানিয়েছে, দেশে প্রাণি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত মেডিসিনের বাজার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ ওষুধের যোগান আসছে স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। অর্থাৎ দুই হাজার একশ কোটি টাকার ওষুধের বাজার এখন এসব কোম্পানিগুলোর দখলে। বাকি ৩০ ভাগ আমদানি হয়।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ দিয়ে দেশের মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশই পূরণ করা সম্ভব বলে দাবি করেছে অ্যানিমাল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদন করা যাবে সমিতি জানিয়েছে।
ভেটেরিনারী মেডিসিনের বাজার প্রতি বছর গড়ে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। কিছু প্রতিষ্ঠান ভেটেনারি মেডিসিন রপ্তানিও শুরু করেছে বলে জানা গেছে। রপ্তানির গন্তব্য আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশ এবং যুক্তরাজ্য।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকারীদের মধ্যে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রেনেটা লিমিটেড, একমি, এসিআই, স্কয়ার, ইলানকো (Elanco), অপসোনিন ফার্মা, এসকে এফ লি, নাভানা, পপুলার ফার্মা ও ইনসেপ্টা ইত্যাদি।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিকিউটিক্যালসের অ্যাসিসস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. হজরত আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অনিয়ন্ত্রিত আমদানির একটা চাপ আছে। এ কারণে আমরা চাইলেই সব মেডিসিন তৈরি করে বাজারজাত করতে পারি না। তবে দেশি উৎপাদনকারীদের চাহিদার অন্তত ৯৫ শতাংশ মেডিসিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে।'
দেশে পোল্ট্রি ও ডেইরী ফার্মের বিকাশ ও বিস্তৃতির সূত্র ধরে ভেটেরিনারী মেডিসিন তৈরির কারখানাগুলো গড়ে উঠতে শুরু করে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুই দশক আগে ভেটেরিনারি মেডিসিনের উৎপাদন শুরু হলেও তা গতি পায় ২০১০ সালের পর থেকে। এই সময়টাতেই অধিকাংশ কোম্পানি কারখানা তৈরি করে। কারণ এই সময়েই দেশে পোল্ট্রি ও ডেইরী ফার্ম সবেচেয়ে বিকশিত হয়। চাহিদা বাড়ে ভেটেরিনারি মেডিসিনের। চাহিদা মেটাতে স্থাপিত হয় একের পর এক কারখানা।
২০০০ সালে দেশে ভেটেরিনারি মেডিসিনের কারখানা ছিল ৩। দুই দশকে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৪টি।
ভেটেরিনারি মেডিসিন তৈরির প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি রেনেটা লিমিটেড।
রেনেটার এনিমেল হেলথ ডিভিশনের পরিচালক মো. সিরাজুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দেশের প্রাণিসম্পদ খাত বড় হওয়ার সাথে সাথেই চাহিদা বেড়েছে ভেটেরিনারী মেডিসিনের। তার সূত্র ধরে এখাতে বিশাল বিনিয়োগও এসেছে।'
দেশি উৎপাদনকারীদের পাশাপাশি প্রাণিস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অনেক ভ্যাক্সিন, অ্যান্টিবায়োটিক বিদেশ থেকেও আমদানি হচ্ছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আমদানি করা বেশিরভাগ ওষুধ আসে ভারত ও চীন-এই দুটি দেশ থেকে।
আমদানি করা ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় উৎপাদকরা। তারা বলেছেন, অনিবন্ধিত ও নিম্নমানের অনেক মেডিসিন আমদানি হচ্ছে। এগুলোর যথাযথ পরীক্ষা ও মনিটরিং হচ্ছে না। এসব মেডিসিন বাজারে আসার আগে ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার দাবি তুলেছেন তারা।
ভেটেরিনারি মেডিসিনের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র মো. আইয়ুব হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রতিটা মেডিসিনের জন্য নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক। তবে আমদানির আগে-পরে সব মেডিসিন পরীক্ষা করা হয় না। কেউ কোনো ওষুধ নিয়ে অভিযোগ করলে সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়।'
সংবাদটি ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন: Local pharmas rise to meet demand for animal drugs