পৃথিবী এখন যে সন্ত্রাসবাদ দেখছে তা অভূতপূর্ব: জাতিসংঘ মহাসচিব
অসহিষ্ণুতা, সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের এক নজিরবিহীন হুমকির মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব, যা প্রতিটি দেশকে প্রভাবিত করে সংঘাত বাড়িয়ে তুলছে, বিশ্বকে অস্থিতিশীল করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলমান সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ কথা বললেন।
মহাসচিব বলেন, “সন্ত্রাসবাদের নতুন ক্ষেত্র সাইবার-সন্ত্রাস, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে। ওয়েবে একযোগে আক্রমণে করে। এভাবে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায় ও নতুন নতুন ফলোয়ার তৈরি করে।"
সন্ত্রাসবাদের এই হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তার ব্যবস্থার উপর জোর দিলেন গুতেরেস। এই ব্যবস্থায় সন্ত্রাসবাদের শেকড়ের কারণগুলো চেনা ও খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে সেজন্য সবসময় মানবাধিকারকে সম্মান করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
চলতি মাসে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে রাশিয়া। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তিনটি ইউরেশিয়ান সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকটির আয়োজন করেছিল ওরা।।
ইউরেশিয়ার তিন সংস্থা হল, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন, কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন ও কমনওয়েলথ।
মহাসচিবের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করলেন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা জোটের প্রতিনিধিরা।সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের লড়াইতেও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর ওপর গুরুত্ব দিলেন তারা।
মার্কিন ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জোনাথন কোহেন মনে করছেন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টা তীব্র বিদ্বেষ ও সহিংস উগ্রবাদের জন্ম দেবে।
কোহেন বলেন, “সদস্য দেশ বা আঞ্চলিক সংস্থাগুলো অহিংস রাজনৈতিক বিরোধিতাকে সহিংসতার মুখোমুখি করে দেয়। তাতে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই শুধু নয়, সন্ত্রাসবাদকে পরাস্ত করার বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাও ব্যাহত হয়।”
রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে জোনাথন বলেন, “সিরিয়াতে বিশ্ব এ ‘বিপজ্জনক দৃষ্টিভঙ্গি’ দেখেছে। সেখানকার সরকার ও তার মিত্র রাশিয়া বেসামরিক নাগরিক, স্কুল, অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালে হামলা করে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের বৈধতা প্রমাণ করতে চায়। এপ্রিল থেকে এ যাবত এক হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে ওরা। আহত হয়েছেন দু’হাজারের বেশি।”
চীনেও সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে মুসলিম সংখ্যালঘু উইঘুরদের দশ লাখের বেশি নাগরিককে এক ধরনের বন্দি করে রাখা হয়েছে। কোহেন মনে করেন, অন্য যে কোনো জাতির মতো চীনেরও অধিকার রয়েছে সন্ত্রাসবাদ দমনের। কিন্তু এর নামে জিনজিয়াং প্রদেশের এই মুসলিমদের শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া যায় না।
ওদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদের হুমকি আসছে সিরিয়া ও ইরাক থেকে। যা খুব দ্রুত লিবিয়াসহ গোটা আফ্রিকায় এবং এশিয়ার মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে ছড়িয়ে পড়ছে।
রুশ মন্ত্রী পশ্চিমা সমালোচনার জবাবে বলেন, “অনেক দেশ দ্বৈত-নীতি অনুসরণ করে। তাদের কারণেই আজ সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
ল্যাভরভ বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না।”
আট-জাতির সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের মহাসচিব ভ্লাদিমির নরোভ সন্ত্রাসবাদের হুমকির মুখে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতার কথা বললেন। সিরিয়া ও ইরাকের ইসলামিক স্টেটের সমর্থকরা নতুন জায়গা খুঁজছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইউরেশিয়ান অঞ্চলেও চলছে সে তৎপরতা।”
রেডিও-অ্যাকটিভ ও বিষাক্ত নানা পদার্থ রয়েছে তাদের হাতে, এই বলে সতর্ক করে নরোভ বললেন, “ওরা সম্ভবত নতুন ধরনের অর্থায়ন ও অস্ত্রের ব্যবহার করবে।”
এই সংস্থার সদস্য দেশগুলো হল, রাশিয়া, চীন, ভারত ও পাকিস্তান। পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেক এর অন্তর্ভুক্ত। সাংহাই কোঅপারেশন কোনো সমারিক সংস্থা নয়, এটি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে শক্তিপ্রয়োগে যাবে না, এ কথাও মনে করিয়ে দিলেন নরোভ।
কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের মহাসচিব ভ্যালেরি সেমেরিকভ কাউন্সিলকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের হুমকির কথা বললেন। এর বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই দরকার সেটাও জানালেন।
এই সংস্থার সদস্য দেশ ছ’টি। রাশিয়া, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরঘিজিস্তান, তাজিকিস্তান ও বেলারুশ মিলে এটি একটি সামরিক জোট। গত মে মাসে ন্যাটোর (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) উদ্দেশে এই জোট সরাসরি এক আবেদন জানায়। যেখানে সন্ত্রাসবাদের বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলায় পরস্পরের প্রতি আস্থা ও সহযোগিতা বাড়াতে বলেছে এই সামরিক জোট।
প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে সেমেরিকভ ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেন বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেন সে বিষয়ে আহ্বান জানালেন