মাহেদী ঝলকে শান্তদের রুদ্ধশ্বাস জয়
মুক্তারে মুক্তি হলো না মুশফিকুর রহিমের দল বেক্সিমকো ঢাকার। মুক্তার আলীর খুনে ব্যাটিংয়ে ঢাকা তখন জয়ের পথে, শেষ ওভারে দরকার তখন ৯ রান। এমন সময়ে ম্যাচ বাঁচানোর দায়িত্ব উঠে আগের ইনিংসে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা মাহেদী হাসানের কাঁধে। চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে বল হাতেও বাজিমাত করে দেখান ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। মাত্র ৬ রান খরচ করে দলকে রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দিয়েছেন তিনি।
শেষ দুই ওভারের নাটকীয়তায় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকাকে ২ রানে হারিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। প্রথমে ব্যাটিং করে আসরের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করা মাহেদী পরে বল হাতে শেষ ওভারে ভেল্কি দেখালেও একটি নো বল করে বিপদই ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু ম্যাচসেরা এই ক্রিকেটার ফ্রি হিটেও ব্যাটসম্যান মুক্তার আলীকে বোকা বানান। আর শেষ বলে এক রান খরচা করে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে রাজশাহী। শুরুতে আনিসুল হক ইমনের পর মাহেদী ও নুরুল হাসানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে ১৬৯ রান তোলে নাজমুল হোসেন শান্ত দল।
জবাবে শুরুটা ভালো না হলেও মুশফিক ও আকবর আলী ৭১ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথেই রাখেন। এরপর মুক্তার আলীর ছোট্ট ব্যাটিং শো। কিন্তু তার ব্যাটে জয় রচিত হয়নি। মাহেদীর দারুণ বোলিংয়ে শেষ ওভারে ৬ রান তোলা ঢাকার ইনিংস শেষ হয় ৫ উইকেটে ১৬৭ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বেক্সিমকো ঢাকার। দলীয় ১৯ রানেই বিদায় নেন তানজিদ হাসান তামিম। তরুণ এই ওপেনার রান আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। কিছুক্ষণ পর আরেক ওপেনার ইয়াসির আলী রাব্বিও থামেন। মাহেদী হাসানের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে দিক হারান তিনি।
এর মাঝেও নাঈম শেখকে বেশ সাবলীল দেখিয়েছে। মারকুটে মেজাজেই ব্যাটিং করছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ১৭ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৬ রান করা নাঈম ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে রনি তালুকদারের হাতে ধরা পড়েন।
৫৫ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও যুব বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলী। দায়িত্বশীল বাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকনে এই দুই ব্যাটসম্যান। চতুর্থ উইকেটে ৭১ রানের জুটি গড়েন তারা।
২৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করা আকবরের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। দলের কঠিন সময়ে অধিনায়ক মুশফিকও দিক হারান। ৩৪ বলে ৩টি ও একটি ছক্কায় ৪১ রান করে আউট হন তিনি। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর দায়িত্ব ওঠে সাব্বির রহমান ও মুক্তার আলীর কাঁধে।
১২ বলে ৩০ রান দরকার তখন ঢাকার। এমন সময়ে ব্যাটকে রীতিমতো খোলা তরবারিতে পরিণত করেন মুক্তার আলী। ফরহাদ রেজার করা ১৯তম ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এই ওভার থেকে আসে ২১ রান। ৯ রান ডিফেন্ড করতে মেহেদীর হাতে বল তুলে দেন রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত। অসাধারণ সব ডেলিভারিতে মুক্তারকে পরাস্ত করে দলের ২ রানের জয় নিশ্চিত করেন মাহেদী।
১৬ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মুক্তার আলী। অপর পাশের অপরাজিত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান দলের জন্য কিছুই করতে পারেননি। ঢিমে তালে ৭ বলে ৫ রান করেন তিনি। ম্যাচসেরা মাহেদী ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় একটি উইকেট নেন। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন এবাদত হোসেন, আরাফাত সানি ও ফরহাদ রেজা।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা রাজশাহীর শুরুটা মন্দ হয়নি। উদ্বোধনী জুটিতে ৩১ রান পায় দলটি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দেখেশুনে খেললেও শুরু থেকেই চড়াও মেজাজে দেখা গেছে আনিসুল ইসলাম ইমনকে। প্রথম বল থেকেই মারকুটে স্টাইলে খেলতে থাকেন ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দলীয় ৩১ রানে শান্তর বিদায়ে ওলট-পালট হয়ে পড়ে রাজশাহীর ব্যাটিং লাইন আপ। অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরে যান চারজন ব্যাটসম্যান। দলীয় ৪৮ রানে ফেরেন রনি তালুকদার। দলীয় ৬৫ রানে সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে রাজশাহীর ইনিংসে। নবম ওভারে মোহাম্মদ আশরাফুলকে ফেরান বল হাতে দারুণ করা মুক্তার আলী।
পরের ওভারে রাজশাহীকে পথ ভুলিয়ে দেন নাঈম হাসান। ঢাকার তরুণ এই স্পিনার ফিরিয়ে দেন আনিসুল ইসলামকে। ফেরার আগে ২৩ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করেন তিনি। এ সময়ই রান আউট হয়ে বিদায় নেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন মাহেদী ও সোহান।
এই দুই ব্যাটসম্যান মুহূর্তেই দলের স্কোরকার্ডের চেহারা পাল্টে দেন। ব্যাট হাতে রীতিমতো ঝড় তোলেন তারা। মাত্র ৪৯ বলে ৮৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। সোহান মাত্র ২০ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন। সোহানের পর বিদায় নেন আসরের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করা মাহেদী। ৩২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫০ রান করেন তিনি।
মাহেদী ও সোহানের বিদায়ের পর রান তোলার গতি কমে যায় রাজশাহীর। শেষের দিকে অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা ৬ বলে অপরাজিত ১১ রান করেন। ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন মুক্তার আলী। এ ছাড়া মেহেদী হাসান রানা, নাসুম আহমেদ ও নাঈম হাসান একটি করে উইকেট নেন।