নানা সংকটের মাঝেও পেশার প্রতি ভালোবাসাই শিক্ষকদের সম্বল
৫ অক্টোবর গোটা বিশ্বে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস। এ সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
রাঙামাটির কাউখালি উপজেলার ঘাগরা কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বেতন পান না গত ১৯ বছর ধরে। সরকারের এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্টে অর্ডার) আদেশ না পাওয়ায় কলেজের ১৫ জন শিক্ষক ও ১০ জন কর্মচারীকে পরিবারসহ কঠিন সংকটময় দিন পার করতে হচ্ছে।
কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০১ সালে। চার বছর পর এটির শিক্ষা-কার্যক্রমের স্বীকৃতি মেলে। এখন কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫০০।
কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল মিত্র চাকমা ২০২২ সালে অবসর নিতে যাচ্ছেন। তিনি জানালেন, তত দিনে এই প্রতিষ্ঠানে তাঁর ১৯ বছরের চাকরিজীবন পূর্ণ হবে। কিন্তু এমপিওভুক্তির আদেশ না পাওয়ায় তিনি এখনও রয়ে গেছেন অনিশ্চয়তায়।
“এত দিন পার হয়ে গেল, এমপিওভুক্তির আদেশ পেলাম না আমরা। তবু এখনও সরকারি উদ্যোগের আশা করছি। প্রধানমন্ত্রী যদি এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেন, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে।”
তবে কলেজের পৌরনীতির শিক্ষক কর্ম সেন চাকমা মাঝে মাঝেই হতাশ হয়ে পড়েন। ২০০১ সাল থেকে তিনি এখানে শিক্ষকতা করছেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষক শিল্পী চাকমাও কলেজের শিক্ষকদের আর্থিক সংকটের কথা বললেন। কলেজের এমপিওভুক্তি না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের এই চাকরির ফলাফল তো শূন্য। অবসরের আগে কলেজের এমপিওভুক্তিই আমাদের একমাত্র দাবি।”
কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষক খুব শিগগির অবসরে যাবেন বলে জানালেন স্বয়ং অধ্যক্ষ।
ময়মিনসিংহ বিদ্যাময়ী গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক নাসিমা আক্তারের গল্পটি ভিন্ন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সেরা শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পর এখানে অনেকের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি।
জামালপুর সদর উপজেলার মাটিখোলা গ্রামের মেয়ে নাসিমা শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন ১৯৯৭ সালে। জামালপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় তাঁর প্রথম কর্মক্ষেত্র। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তান বলে মনে করেছেন সব সময়, জানালেন নাসিমা।
আর তাই নিজের বেতনের টাকায় এই শিক্ষক আট জন শিক্ষার্থীর পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। আরও তিন জনকে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সমর্থন করে যাচ্ছেন।
শত শত শিক্ষার্থী তাঁকে মা বলে ডাকে। নাসিমা বললেন, “এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”