চার খাতে রপ্তানি বৈচিত্র্য আনতে চায় সরকার
দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, প্লাস্টিক এবং হালকা প্রকৌশল খাতকে উন্নীত করতে সরকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের রপ্তানি পণ্যসমূহে বৈচিত্র আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবে, যার আওতায় আলোচিত চারটি খাতে সহায়ক অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে।
কর্মসংস্থানের জন্য রপ্তানি প্রতিযোগী সক্ষমতা (EC4J) প্রকল্প' শীর্ষক নতুন উদ্যোগটিতে ৪ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। এর মাধ্যমে ৯০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরির আশা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তহবিলের সাহায্যে নির্ধারিত চার খাতের রপ্তানিমুখী আড়াইশ' বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কেন্দ্রের মান ও অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে।
আজ প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনলাইন অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সির প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার 'পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার কনস্ট্রেইন্টস' (পিআইএফআইসি) শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রকল্প সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়। রাজধানীতে বাংলাদেশ ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন (EC4J) প্রকল্প পরিচালক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আজম।
প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যগুলো তুলে ধরে এসময় সচিব আজম জানান, আলোচিত চার খাতের আড়াইশ' কোম্পানি যাতে বিশ্বমানে উন্নীত হয় সরকার সেই লক্ষ্যই নিয়েছে।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় উচ্চ সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণেই এই খাতগুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে।
আজম বলেন, পাট ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতেও আরও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য এ জাতীয় একটি পৃথক বিনিয়োগ প্রকল্প শুরুর কাজ চলছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থানের অধিকাংশ বাংলাদেশেই তৈরি হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন আলোচিত চার খাতের রপ্তানি মাত্রা উল্লেখযোগ্য বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আজম উল্লেখ করেন যে, প্রকল্পের আওতায় চলমান কোভিড-১৯ অতিমারি নিয়ন্ত্রণে ৮০ লাখ ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হবে।
নির্ধারিত চার খাত ছাড়াও চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং মাস্ক উৎপাদনেও এ তহবিল থেকে বিশেষ অনুদান দেওয়ার কথা জানান তিনি।
পিআইএফআইসি'র আওতায় দেশে সংশ্লিষ্ট শিল্পঘন ১৫-২০টি ক্লাস্টারে মোট ৪ কোটি ডলার অনুদান এবং কারিগরি সহায়তার আকারে দেওয়া হবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে পানি পরিশোধন স্থাপনা নির্মান, শিল্পাঞ্চলে উন্নত পানি সংযোগ লাইন স্থাপন, বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ অনুদান হিসাবে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, বিশেষায়িত গুদামঘর নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মতো নানা বিষয়েও থাকবে অর্থ সহায়তা।
শিল্পঘন এলাকাগুলোয় উন্নত টেলিকম সংযোগ, সড়ক সংযোগ এবং শিল্প পার্কের মতো অন্যান্য সাধারণ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে যখন কমপক্ষে একটি শিল্প ক্লাস্টার (একইখাতের বা পারস্পরিক নির্ভরশীল শিল্প) উপকৃত হবে শুধুমাত্র তখনই অনুদান দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুবিদার্থে এই অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
এর উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই চারটি খাতে অবকাঠামোগত বাধা দূর করা।
এই লক্ষ্যে, পিআইএফআইসি শিল্প ক্লাস্টারগুলিতে অবস্থিত শিল্প সংস্থা, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করছে।
উপযুক্ত আবেদনের ভিত্তিতে পিআইএফআইসি অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগের জন্য প্রকল্প নির্বাচন করবে।
নির্বাচনের পর মনোনীত প্রার্থীদের সম্পূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করতেও নির্দেশনাসহ সক্রিয়ভাবে সহায়তা করা হবে।
পিআইএফআইসি'র মাধ্যমে প্রকল্প সম্ভব্যতা যাচাই, প্রকল্প মূল্যায়ন, কারিগরি নকশা, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কাগজপত্র প্রস্তুতকরণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের নজরদারির মতো সেবা থাকছে।
তবে সার্বিকভাবে এসব কিছুই পরিচালিত হবে (EC4J) প্রকল্পের আওতায়।