নাঈমের সেঞ্চুরির পরও ঢাকার হার, প্লে-অফে তামিমরা
জিতলেই প্লে-অফ। হারলেও আশা থাকবে, তবে বড় ব্যবধানে হারলে বিদায়। কঠিন এই সমীকরণ নিয়ে বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ফরচুন বরিশাল। পুরো আসরে অনুজ্জ্বল থাকা বরিশাল চাপের বোঝা মাথায় নিয়েও এই ম্যাচে জ্বলে উঠলো। অবশ্য ম্যাচসেরা নাঈম শেখের চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরিতে জয়ের আশা ফিঁকে হয়ে উঠেছিল বরিশালের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তামিম ইকবালের দল।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকাকে ২ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। এই জয়ে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফে উঠেছে বরিশাল। অবশ্য জয়ের আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত হয় তাদের। ঢাকা ১৮.৩ ওভারে ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হওয়ায় তখনই শেষ চারের টিকেট পেয়ে যান তামিমরা। ম্যাচটি হারলেও প্লে-অফ খেলতো তারাই। ৮ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট বরিশালের। ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে অপেক্ষায় থাকা মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে।
বরিশালের জয়ের আগেই প্রথম কোয়ালিফায়ারের দুই দল নিশ্চিত হয়ে যায়। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী ১৪ ডিসেম্বর মুখোমুখি হবে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও জেমকন খুলনা। একইদিনে আগের ম্যাচে এলিমিনেটর খেলবে বেক্সিমকো ঢাকা ও ফরচুন বরিশাল। এই ম্যাচের জয়ী দল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে আগামী ১৫ ডিসেম্বর মুখোমুখি হবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়া দলের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুন বরিশাল। সাইফ হাসান, আফিফ হোসেন ও তৌহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে তামিম ইকবালের দল। জবাবে নাঈম শেখের অসাধারণ সেঞ্চুরির পরও জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি ঢাকা। ৬ উইকেটে ১৯১ রানে থামে মুশফিকুর রহিমের দল।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বেক্সিমকো ঢাকার শুরুটা খারাপ হয়নি। উদ্বোধনী জুটিতে ৫১ রান যোগ করেন সেঞ্চুরিয়ান নাঈম শেখ ও সাব্বির রহমান। সাব্বির ১৯ রান করে ফেরার পর বিপদে পড়ে ঢাকা। দ্রুত ফিরে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও আল আমিন জুনিয়র।
৬২ রানে ৩ উইকেট পড়লেও দলকে সেই চাপ বুঝতে দেননি চোখ জুড়ানো ব্যাটিং করা নাঈম শেখ। ইয়াসির আলী রাব্বিকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন নাঈম। বাঁহাতি এই ওপেনার ৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। যদিও এ সময় সাজঘরে ফিরতে পারতেন নাঈম। কিন্তু তার তোলা ক্যাচ মাটিতে ফেলে দেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ হোসেন ইমন।
এই একটা ক্যাচ মিসই কাল হয়ে দাঁড়ায় বরিশালের জন্য। ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব শুরু করে নাঈম শেখ। ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করা তরুণ এই ব্যাটসম্যান ৬০ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে জয়ের পথে এগোতে থাকে ঢাকা। অপর প্রান্ত থেকে ইয়াসিরও ব্যাট চালাতে থাকেন। ১০৫ রানে করে নাঈম বিদায় নিলে ভাঙে ১১০ রানের জুটি।
নাঈমের বিদায়ের পর অন্য ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি ইয়াসির। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৮ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ রান করে রান আউটের মিকার হন। শেষ ওভারে মুক্তার আলী, আকবর আলীরা ছক্কা মারলেও ২ রানের ব্যবধান থেকে যায়। টুর্নামেন্টে প্রথম সুযোগ পাওয়া বরিশালের অভিজ্ঞ স্পিনার সোহরাওয়ার্দী শুভ ১৩ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সুমন খান ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
এরআগে ব্যাটিং করা ফরচুন বরিশালের ৫ জন ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পেয়েছেন। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ১৯ ও পারভেজ হোসেন ইমন ১৩ রান করে থামলেও বাকি তিন ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। আফিফ হোসেন ও তৌহিদ হৃদয় রীতিমতো ঝড় তোলেন মিরপুরের ২২ গজে।
ওপেনার সাইফ ৪৩ বলে ৮টি চারে ৫০ রান করে আউট হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তাণ্ডব চালিয়েছেন আফিফ ও হৃদয়। চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন এই দুই তরুণ তুর্কি। শেষ ৫ ওভারে ৭৮ রান তোলেন আফিফ-হৃদয়। বিশ্বজয়ী যুব দলের সদস্য হৃদয় একটু বেশিই খুনে মেজাজে ছিলেন।
চোখ জুড়ানো সব শটে মাত্র ২২ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় হার না মানা ৫১ রান করেন হৃদয়। যা চলতি আসরে এখন পর্যন্ত দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। আফিফও কম যাননি। ২৫ বলে একটি চার ও ৫টি ছক্কায় অপরাজিত ৫০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। যা চলতি আসরের দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। ঢাকার তিন পেসার রুবেল হোসেন, আল আমিন ও মুক্তার আলী একটি করে উইকেট পান।