মাহমুদউল্লাহর হাত ধরে খুলনার শিরোপা
শেষ ডেলিভারিটি করলেন জেমকন খুলনার পেসার শহিদুল ইসলাম। ফুল টস পেয়ে আকাশে বল পাঠিয়ে দিলেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের নাহিদুল ইসলাম। আকাশ ছুঁয়ে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বল গিয়ে পড়ল সীমানার বাইরে, ছক্কা। কিন্তু এই ছক্কা আনন্দ দিতে পারেনি চট্টগ্রামকে, শিরোপা উৎসবে মেতে উঠেছে খুলনা। ততোক্ষণে ৫ রানের দারুণ এক জয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে তারা।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির শিরোপা জিতেছে খুলনা। যে কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খুলনার ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য এটাই প্রথম শিরোপা। অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট জিতলেন। খুলনার কোচ মিজানুর রহমান বাবুলও প্রথমবারের মতো কোনো শিরোপার স্বাদ পেলেন।
টি-টোয়েন্টির প্রথম শিরোপা হলেও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বৃহস্পতি তুঙ্গে আছে। করোনার বিরতির পর মাঠে ফিরেই শিরোপা উঠেছিল তার হাতে। নিজ নামের মাহমুদউল্লাহ একাদশকে নেতৃত্ব দিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের শিরোপা জেতেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। এবার আরও একটি শিরোপা উঠলো তার হাতে।
ফাইনালে অনেকের বাজিই হয়তো চট্টগ্রামের পক্ষে ছিল। দাপুটে জয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা মোহাম্মদ মিঠুনের দল গ্রুপ পর্বের ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জয় পায়। গ্রুপ পর্বে দুই সাক্ষাতেই চট্টগ্রামের বিপক্ষে হার মানে খুলনা। কিন্তু আসল দুই লড়াইয়েই বিজয় নিশান উড়িয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। প্রথম কোয়ালিফায়ারে চট্গ্রামকে ৪৭ রানে হারিয়েই ফাইনালে ওঠে খুলনা। ফাইনালেও থাকলো খুলনার শাসন।
দলের দুঃসময়ে সত্যিকারের নেতা হয়ে উঠেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান পাঁচ নম্বরে নেমে খেলেন শেষ পর্যন্ত। শুরুতে রয়েসয়ে ব্যাট চালালেও শেষটা করেন খুনে। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় খুলনা। ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহর ৭০ রানের মহামূল্যবান ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান তোলে খুলনা।
জবাবে টপ অর্ডার সেভাবে দলকে এগিয়ে নিতে না পারলেও দারুণ ব্যাটিংয়ে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন সৈকত আলী। কিন্তু তার ৫৩ রানের ইনিংস যথেষ্ট হয়নি। ৬ উইকেটে ১৫০ রানে শেষ হয় গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে তেড়েফুঁড়েই শুরু করেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। ৩.৩ ওভারে ২৬ রান যোগ করেন তারা। এমন সময়ে ছন্দপতন, ১২ রান করে শুভাগত হোমের বলে বোল্ড হয়ে যান সৌম্য। এরপর অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনও বিদায় নেন।
৩৫ রানে ২ উইকেট হারানো চট্টগ্রামের বিপদ বাড়ে লিটন দাসের বিদায়ে। ৫০ পেরিয়ে রান আউটের শিকার হন পুরো টুর্নামেন্টে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ডানহাতি এই ওপেনার। ২৩ বলে ২টি চারে ২৩ রান করে আউট হন লিটন। এরপর দলকে পথ দেখাতে থাকেন সৈকত আলী ও শামসুর রহমান শুভ।
চতুর্থ উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। শামসুর ২১ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করে ফিরলেও অবিচল থাকেন সৈকত আলী। মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন চট্টগ্রামের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৩৮ রান করেই বিদায় নিতে পারতেন সৈকত আলী। কিন্তু আল আমিন হোসেনের বলে তার তোলা ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি খুলনার উইকেটরক্ষক জাকির হাসান। সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগিয়ে ৪১ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সৈকত আলী, দলকেও রাখেন জয়ের পথে। অন্য প্রান্তে থেকে মোসাদ্দেক শুধু সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
শেষ ১২ বলে ২৯ রান দরকার হয় চট্টগ্রামের। ১৯তম ওভার থেকে ১৩ রান নিলে শেষ ওভারে চট্টগ্রামের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৬ রান। কিন্তু খুলনার পেসার শহিদুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ে এই রান তুলতে পারেননি সৈকত আলী ও মোসাদ্দেক। পরপর দুই বলে এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরান শহিদুল।
মোসাদ্দেক ১৪ বলে ১৯ রান করে থামেন। সৈকত আলী ৪৫ বলে ৪টি চারে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন। খুলনার পক্ষে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন শহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া একটি করে উইকেট পান শুভাগত হোম, আল আমিন হোসেন ও হাসান মাহমুদ।
এরআগে ব্যাটিং করা জেমকন খুলনার শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমি। শুরুতে উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে ওঠার আগে আরও একটি উইকেট হারায় তারা। দলীয় ২১ রানে ইমরুল কায়েস সাজঘরে ফেরেন।
দারুণ শুরু করা জাকির হাসানও ইনিংস বড় করতে পারেনননি। ২০ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৫ রান করেন থামেন তরুণ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়েন আরিফুল হক। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২১ রান করে থামলেও ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহ ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন।
খুলনার ইনিংসে একমাত্র মাহমুদউল্লাহই কার্যকরী ব্যাটিং করেছেন। নেতার মতো খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি। সৌম্য সরকারের করা শেষ ওভারে ১৭ রান তোলেন খুলনার অধিনায়ক। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার ৪৮ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় হার না মানা ৭০ রান করেন। শুভাগত হোম করেন ১৫ রান। চট্টগ্রামের নাহিদুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন।