দেশে এক বছরে ২২ এশিয়ান হাতির মৃত্যু
দেশে চলতি বছর ২২ টি এশিয়ান হাতি মারা গেছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসেই চারটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া এসব হাতির বেশিরভাগই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ও প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মীরা।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিপন্ন এশিয়ান হাতি রক্ষায় মানববন্ধন ও গণঅবস্থান কর্মসূচিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষায় সম্মিলিত আন্দোলন এ ব্যানারে পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার পব বাংলাদেশ, বেঙ্গল ডিসকভার, সোসাইটি অব রাইজ ফর পজ এন্ড ক্লজ ও ১/২৪ সোশ্যাল মুভমেন্ট এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এসময় বক্তারা বন্যহাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ, খাবার ও পানির উৎস রক্ষায় গহীন বনের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, হাতির নিরাপত্তা, অভয়ারণ্যসহ বনে পর্যাপ্ত খাদ্য শৃঙ্খল গড়ে তোলার দাবি জানান। একইসাথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অব্যাহত বন্যহাতি হত্যা বন্ধ করা ও হাতি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মানববন্ধনে 'সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এন এম মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ইকো সিস্টেম ধ্বংস করে উন্নয়ন করা যাবে না। হাতির চলাচলের পথ ঠিক রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। বন্যপ্রাণী ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকবো। এসময় তিনি বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগের তাগিদ দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে হাতি হত্যা ও মারা যেতে থাকলে শিগগিরই এ দেশ থেকে প্রাণীটি বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই হাতি সংরক্ষণকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হাতি সংরক্ষণের উদ্যোগগুলো কার্যকারিতা নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা পূর্বক প্রয়োজনে সংরক্ষণ কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে, তাহলেই ভবিষ্যতে হাতি সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
এদিকে মানববন্ধনে হাতি রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হল:
১. চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অব্যাহত বন্যহাতি হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং হাতি হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. বন্যহাতির প্রাকৃতিক চলার পথ, খাবার পানির উৎস গহীন বনের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণসহ হাতির নিরাপত্তা, অভয়ারণ্যসহ বনে পর্যাপ্ত খাদ্য শৃঙ্খল নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বন্যপ্রাণী ও হাতির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ও কর্তব্য অবহেলার ঘটনা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ব্যর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ সংশোধন করে হাতির বাণিজ্যিক ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
৫. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও প্রাণী কল্যাণ আইন যথাযথ কার্যকর করতে হবে।