অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে: বিএফআইইউ
সারাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অনেক অনেক বাংলাদেশী 'তিন পাত্তি গোল্ড'সহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়া গেম খেলছেন এবং তাদের গেমিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) মাল্টার একটি অনলাইন গেমিং প্রতিষ্ঠানে ২০ জন বাংলাদেশীর নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছেন। তারা গত অর্থবছরে অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা জমা করেছেন এবং প্রায় ২২ কোটি টাকা তুলেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০১৯-২০'র বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জুয়াড়িরা নেটেলার, স্ক্রিল এবং মানিবুকারস এর মতো পরিসেবার মাধ্যমে গেমিং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা জমা ও তোলার কাজ করেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অর্থের উৎসের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব ও প্রচুর অর্থ সরবরাহের কারণে ২০ জন বাংলাদেশীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে গেমিং কোম্পানিগুলো।
অনলাইন জুয়া খেলা ও অর্থ পাচারের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল আর্থিক পরিসেবাও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে বিএফআইইউ।
ভারতের বেঙ্গালুরু ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি তিন পাত্তি গোল্ড গেমটি বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে গেমটি 'চিপ' (তিন পাত্তি জুয়ার ভার্চুয়াল কয়েন) ক্রয়- বিক্রয়ের কাজ করছেন। মূলত মোবাইল আর্থিক পরিসেবার মাধ্যমেই এ ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ হয়ে থাকে এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এর বিপণন হয়।
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস ভিত্তিক ভিত্তিক মোবাইল ব্যবহারকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ সববয়সী মানুষ গেমটিতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের লেনদেন বিশ্লেষণ করেও বিএফআইইউ দেখতে পায়, তিন পাত্তি গেম অ্যাপ ব্যবহার করে প্রায় ২ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। জুয়াড়িরা মোবাইল আর্থিক পরিসেবার মাধ্যমে ৬০টাকা, ৭৫ টাকা, ৮০ টাকা, ১৫০ টাকা ও ৩৩০ টাকা এভাবে অল্প অল্প করে অর্থ পাচারের কাজ করেছেন।
ক্যাশ-ইন ও ক্যাশ-আউটের গড় পরিমাণ ছিল ২৩৯ টাকা ও সর্বোচ্চ ক্যাশ-আউট ছিল ১০ হাজার টাকা।
জুয়াড়িয়া কীভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ জমা করেন?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাওয়ালা/হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের কাজ হয়ে থাকে। অনলাইনে জুয়া খেলতে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তিকে নেটেলার, স্ক্রিল বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়, অথবা দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে তার অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে হয়।
তারপর তারা বিদেশি ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করেন এমন কোনো ফ্রিল্যান্সার বা অ্যাকাউন্টে ডলার আছে এমন কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেন। তারা দ্বিতীয় পক্ষকে আগেই দেশীয় মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করেন। দ্বিতীয় পক্ষ তখন তার ক্লায়েন্টকে জুয়াড়ির নেটেলার বা স্ক্রিলের মাধ্যমে তার অর্থ পরিশোধ করতে বলেন।
এভাবেই জুয়া খেলার জন্য ডিজিটাল ওয়ালেটে অর্থ সরবরাহ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনেক এজেন্ট/মধ্যস্থতাকারীও নিয়োজিত থাকেন যারা বিকাশ ও অন্যান্য মোবাইল আর্থিক পরিসেবার মাধ্যমে ভবিষ্যতে গেম খেলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের অর্থ সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের ই-মানি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেন।
এছাড়াও, ফেসবুক সার্চের মাধ্যমে দেখা গেছে পেমেন্ট.বিডির মতো কিছু প্রতিষ্ঠান নেটেলার, স্ক্রিল অন্যন্য ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। সর্বনিম্ন ৫০০ ডলার হলে নেটেলার অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করে দেয় পেমেন্ট.বিডি।
কেউ তার ব্যক্তিগত নেটেলার অ্যাকাউন্টে ডলার জমা করতে চাইলে, সেবামূল্য সহ প্রতি মার্কিন ডলারে ১০৫ টাকা পরিশোধ করতে হয়। প্রতি ডলারে ১০০টাকা নেয়া হয় এবং বাকি ৫ টাকা সেবামূল্য ধরা হয়।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার অন্তত ৫টি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত থাকা, জুয়া খেলা ও মাদক সেবনের অভিযোগে ১৮২ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। সেসময় অন্তত ২টি ক্লাব বন্ধ করে দেয় র্যাব। পরবর্তীতে অক্টোবরে অনলাইন ক্যাসিনা কিংপিন সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে র্যাব।