‘সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্যাতনের সুযোগ খুঁজছে’
‘মহানবী (সা:)-কে ফেসবুক পোস্টে কটূক্তি করা হয়েছে’ এমন অভিযোগ এনে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফাঁসির দাবিতে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে স্থানীয় কিছু লোক রোববার বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে জনতার একাংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। আহত হন শ’দুয়েক।
ভোলার বোরহানউদ্দিনের এই ঘটনার সঙ্গে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা এবং ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুপল্লীতে হামলার মিল খুঁজে পেয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান।
ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এই অধ্যাপক বলেছেন, ভোলায় যে উপায়ে এই ঘটনার সৃষ্টি করা হয়েছে তা রামু এবং নাসিরনগরেও হয়েছিল।
“এর একটা প্যাটার্ন আমরা দেখতে পাচ্ছি, রামুতে হয়েছে এরকম, নাসিরনগরেও হয়েছে। তার থেকে বোঝা যায় যে, সাম্প্রদায়িক শক্তি সারাদেশেই ছড়িয়ে রয়েছে। তারা উপলক্ষ খুঁজছে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন চালানোর জন্য।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই এমিরেটাস অধ্যাপকের মতে, ভোলায় পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসার পর গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হয়েছে।
“ভোলার এই ব্যাপারটাতে দেখা গেল যে, পরিস্থিতি একরকম নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল। তারপর আবার ইমামকে ধরে নিয়েছে এই গুজব দিয়ে, পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হল। বোঝা যায়, কিছু লোক এখানে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের সুযোগ খুঁজছে এবং এটা হলে মনে করে, তাদের যে ভাবধারা সেটার প্রচার করতে সমর্থ হবে।”
তিনি বলেন, “একে শক্ত হাতে দমন করা দরকার। আমার ধারণা, হয়তো এদের সঙ্গে জঙ্গিদেরও সংযোগ থাকতে পারে। সেটা ভালো করে খুঁজতে হবে।”
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বলে মনে করছেন প্রবীণ এই শিক্ষক। তাই সমাজের সব ক্ষেত্রে সহনশীলতার আদর্শ প্রচারের মাধম্যে এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মত দেন তিনি।
সমাধানের পথনির্দেশ হিসেবে ড. আনিসুজ্জামান পরিবার, সমাজ, শিক্ষা ক্ষেত্র- সব জায়গায় সহনশীলতার আদর্শ প্রচার করার ওপর জোর দিলেন। সেটি সম্ভব হলে, তাঁর মতে, সমাজে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি বন্ধ হবে।