মহামারির সময় তৈরি পোশাক খাতের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন: গবেষণা
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ৩.৫৭ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। গত শনিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর- ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে গড়ে ১০.৮ শতাংশ। এ সময়ে প্রতি ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের সংখ্যা গড়ে কমে ৮৮৬ থেকে ৭৯০ তে দাঁড়িয়েছে।
এ খাতে মোট চাকরি হারানোর হার ১৩.৯৫ শতাংশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) পরিচালিত যৌথ এ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের অক্টোবর- নভেম্বরে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৬১০টি ফ্যাক্টরিতে এ গবেষণা চালানো হয়।
'ভালনেরাবিলিটি, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রিকভারি ইন দ্য আরএমজি সেক্টর ইন ভিউ অব কোভিড প্যান্ডেমিক: ফাইন্ডিংস ফ্রম দ্য ইন্টারপ্রাইজ সার্ভে' শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহামারীর সময় ২৩২টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়, যা দেশের মোট ফ্যাক্টরির সংখ্যার প্রায় ৬.৯ শতাংশ।
এরমধ্যে ১৮৮টি ফ্যাক্টরি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য। তবে গবেষণা নমুনার প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের ২.৭ শতাংশ শ্রমিক মহামারির সময় কাজ হারিয়েছেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবিষয়ে জানান, অর্ডার কম থাকায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করে ছাটাই করেছে।
"আরএমজি খাত বেশ কিছু সময় ধরে দক্ষ জনবলের অভাবে ভোগায়, এখন ফ্যাক্টরিগুলোতে আবারও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।" গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশের জন্য অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে বলেন তিনি।
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে রপ্তানি নির্ভর খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া সত্ত্বেও সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় গবেষণায়। তবে, এ খাতের উন্নয়ন বেশ ধীর গতিতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম ভিত্তিক ছোট ফ্যাক্টরিগুলো কোনো সংগঠনের সদস্য না হওয়ায় বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "বেশিরভাগ ছোট ফ্যাক্টরিই প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য আবেদনের জটিল প্রক্রিয়ার কারণে ঋণের আবেদন করতে পারেনি।"
তিনি আরও বলেন, "প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণ হয়েছে। সাহায্য পায়নি এমন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো সংগঠনের সদস্য নয়। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ৯০ শতাংশ সাহায্যের আবেদন করলেও, মাত্র ৪০ শতাংশ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পেরেছেন।"
নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত বেশিরভাগ ফ্যাক্টরিই ঋণ ও ব্যাংক ডিপোজিটের ওপর নির্ভরশীল এমন তথ্যও উঠে এসেছে গবেষণাটিতে।
মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য একক ক্রেতার ওপর নির্ভরশীলতা, ক্রেতার সংখ্যার কম এসব বাধা কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দেয়া হয় গবেষণায়। এবিষয়টি শুধু ছোট প্রতিষ্ঠানেরই নয়, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরও একটি বড় দুর্বলতা।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, সভাটি পরিচালনা করেন এমআইবি'র প্রোজেক্ট ম্যানেজার হাসিবুদ্দীন হোসেন।
সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আরএমজি খাতের বর্তমান অবস্থা নিরূপণে এ গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। আরএমজি ছাড়াও প্রায় সকল খাতেই মহামারির প্রভাব পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।