ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে জুতাশিল্প
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কম চাহিদার কারণে মহামারির আঘাত পুষিয়ে নিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের ফুটওয়্যার খাত।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পারতপক্ষে প্রয়োজন না হলে মানুষ জুতা কিনছেন না। মহামারির কারণে অনেকের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছেন ক্রেতারা। একারণেই মহামারির আঘাতে ৪০ শতাংশ লোকসানের মুখে পড়া এ খাত এখনো মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। ১২-১৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি থাকা এ খাত বর্তমানে লোকসান গুনছে।
বাটা, এপেক্স ফুটওয়্যার, ফরচুন সুজ, ফরচুনা, বে, হামকো, জেনিস, ক্রিসেন্ট, ভাইব্রেন্ট, লেদারেক্স, স্টেপ, ওয়াকার, ওরিওন, ফ্যালকন, জেলিস, শাম্পানের মতো ব্র্যান্ডগুলো গ্রাহক অনুপস্থিতির কারণে কঠিন সময় পার করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব দেশে রপ্তানি করে থাকে সেসব দেশে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে লকডাউন জারি হওয়ায় রপ্তানি কমে গেছে।
শুধু দেশীয় বিক্রির ওপর নির্ভরশীল নন-ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক চিত্রও অনেকটা এরকমই। লেদার ও ফুটওয়্যার খাতের খাতের ৬টি প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের অর্ধেক সময়েই জুতা তৈরি করা বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠানের মুনাফাও কমেছে।
"অনেক দেশেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এবছরের এপ্রিলের মধ্যেই জুতাশিল্প খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছি," বলেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন।
তিনি বলেন, "মহামারির অবস্থার উন্নতি হলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে পণ্য বিক্রি বাড়েনি।"
২০২০ সালের বাটা সুজের আয় কমেছে ১৮ শতাংশ এবং ১২২.০৬ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শেয়ার প্রতি এ ক্ষতির পরিমাণ ৮৯.২৩ টাকা।
২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চে বাটা সুজের মুনাফা ছিল ২.৮৩ কোটি টাকা ট মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২.০৭ টাকা। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকেই (এপ্রিল-জুন) লকডাউনের সময় ৭৩.৫১ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে। শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৫৩.৭৪ টাকা। নীট মুনাফা ছিল ২১.৬৮ কোটি টাকা ও ইপিএস ছিল ১৫.৮৫ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাটার একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "লকডাউনের সময় যে পরিমাণ বিক্রি কমে গিয়েছিল, বর্তমানে সে তুলনায় বিক্রি কিছুটা বাড়লেও কোম্পানি বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।"
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের আয় কমেছে ১৪ শতাংশ, দেশীয় বিক্রি ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় ইপিএস কমেছে ২৯ শতাংশ। গত জুলাই-ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আয় কমে ৭৮৫.০৬ থেকে ৬৫২.৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ইপিএস ৫.১৮ টাকা থেকে কমে ৩.৬৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
"মহামারির কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ব্যয়ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। সবাই ব্যয় সংকোচন করছেন। একারণে তারা প্রয়োজন ছাড়া জুতা কিনছেন না।" বলেন এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি মো ওমর ফারুক।
রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ফরচুন শুজ লিমিটেডের বিক্রি ও মুনাফাও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস কমেছে ৩৯ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কমেছে ১৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে রপ্তানিমুখী লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেডের ইপিএস বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের ইপিএস ০.২০ টাকা থেকে বেড়ে ০.৪১ টাকা হয়। তবে একই বছরের প্রথমার্ধে ইপিএস ৭৬ শতাংশ কমে ০.৩৯ টাকা থেকে ০.০৯ টাকায় দাঁড়ায়।
ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ২০১৯ সালের বাংলাদেশের ট্যানারি ও জুতাশিল্প সম্পর্কিত এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছর বাংলাদেশ ৩৭ কোটি ৮০ লাখ জোড়া জুতা উৎপাদন করে।
১৭ হাজার কোটি টাকার জুতাশিল্পের দেশীয় বাজারের বছরপ্রতি স্থানীয় চাহিদা ২০-২৫ কোটি জোড়া জুতা। দেশীয় জুতাশিল্পের দুটি বিভাগ আছে- ব্র্যান্ডেড ও নন- ব্র্যান্ডেড। এ খাতের বেশিরভাগ বিক্রিই করে নন-ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ব্র্যান্ডেড ফুটওয়্যারের মার্কেট শেয়ার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেশীয় বাজারের ৩০ শতাংশ বর্তমানে তাদের দখলে।
জুতাশিল্পের প্রবৃদ্ধির হার ১২-১৫ শতাংশ। এ খাতের ২৫-৩০ শতাংশ বিক্রিই হয় ইদ-উল-ফিতরের সময়। গবেষণাটিতে বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার এ খাতের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
- মূল নিউজ: Footwear recovery still in the slow lane
- অনুবাদ: রাফিয়া তামান্না