দ্বিতীয়বার কোভিড সংক্রমণের সম্ভাব্যতা আমাদের ধারণার চাইতেও বেশি: চিকিৎসক
চারমাসের ব্যবধানে দু'বার কোভিড-১৯ এ সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রতিবার সংক্রমণের তীব্রতা হবে ভিন্ন। অবাক করার মত তথ্য হলেও চিকিৎসকেরা সম্প্রতি এমনটিই জানিয়েছেন।
এক রোগীর চারমাসে পরপর দু'বার কোভিডে আক্রান্তের পর এই সতর্কতাটি এলো। তার ভেতরে তেমন প্রকট কোন লক্ষণ দেখা যায়নি এবং প্রথমবার সংক্রমণের পর বেশ কয়েকবার তার করোনাভাইরাস সনাক্তের ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল।
তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার ফলে সংক্রমণের হার বেড়ে গেলেও প্রথম বারের মত মারাত্মক সংক্রমণ দ্বিতীয়বার দেখা যায় না। এসময় বরং অনেকটাই মৃদু উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়।
এখনো সেভাবে করোনা দ্বারা একাধিকবার সংক্রমিত হবার মত সংবাদ সেভাবে শোনা যায় নি, তবে ডাক্তারদের কাছে ঠিকই কিছু কিছু রিপোর্ট এসেছে।
পূর্ববর্তী কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে পুনরায় সংক্রমণ সম্ভব; তবে সেখানে এটিও উল্লেখ ছিল যে, একবার সংক্রমিত হবার পর আক্রান্তের দেহে পরবর্তী অন্তত চার মাস পর্যন্ত 'ইম্যুনিটি' থেকে যায়।
বিএমজে কেস রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত এ রিপোর্টটিতে বিশেষজ্ঞরা জানান, এটা এখনো স্পষ্ট নয় যে প্রথমবার সংক্রমণের প্রভাবই দীর্ঘমেয়াদে রয়ে যাচ্ছে নাকি ভাইরাস পুনরায় আক্রমণ করছে!
সমীক্ষাটি পর্যালোচনাকারী লেখকেরাও বলেছেন যে, যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারীটি বিস্তার লাভ করেছে, তাতে SARS-CoV-2 ভাইরাসের পুনরায় সংক্রমণ সম্ভব। ফলে আপনি আরোগ্য লাভের কিছুদিন পর যদি আবারো কোভিড সনাক্তের পরীক্ষা করান এবং তাতে টেস্টের ফলাফল পজিটেভ আসে তাহলে বোঝা দুষ্কর যে প্রথমবার সংক্রমণের ধারাটিই এখনো সক্রিয় কিনা।
তারা আরও যোগ করেন, "গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীর দেহে যদি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি বিকাশ লাভ করে তাহলে পুনরায় সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে"।
দ্বিতীয়বার কোভিডে আক্রান্তের যে সম্ভাব্যতার কথা চিকিৎসকেরা দাবি করছেন তা নিয়ে আরও দীর্ঘমেয়াদে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলেও তারা জানান।
চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের এক ব্যক্তি কোভিড-১৯ এর মৃদু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পরই মূলত চিকিৎসকবৃন্দ এ বিষয়টির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেন। সে ব্যক্তি ঠিক চার মাস আগেই, ২০২০ এর এপ্রিলে মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
তার টাইপ-২ ডায়বেটিস, থাইরয়েড এবং স্থূলতার সমস্যা ছিল- বলাইবাহুল্য এ সবগুলো রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
প্রথমবার তিনি তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না, ওষুধের পাশাপাশি তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাসগ্রহণের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়েছিল। রক্তনালীর সমস্যায়ও ভুগছিলেন।
গুরুতর সব জটিলতায় ভুগে প্রায় দু'মাসের মত তাকে হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়েছিল।
২০২০ এর আগস্টে এসে দ্বিতীয় দফায় তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ সনাক্ত হন। এর আগের তিন মাসে তিনি চারবার টেস্ট করান, প্রতিবার ফল আসে নেগেটিভ। মাত্র একদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল।
এবার সনাক্তের দুই সপ্তাহ পরে তাকে আবার এক সপ্তাহের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লোকটি বারবার জোর দিয়ে বলেন যে, পরিবার এবং খুব কাছের লোকজন ছাড়া তিনি কারও সংস্পর্শে আসেননি এবং এদের কারোর ভেতরেই কোভিডের কোনরূপ লক্ষণ বা সম্প্রতি অসুস্থতার ঘটনা ঘটেনি।
সমীক্ষার লেখকেরা বলছেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও সংক্রমিত হবার ফলেই কোভিড সনাক্তকরণ পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। তবে প্রথমবার আক্রান্তের সময় দেহে রয়ে যাওয়া 'ইম্যুনিটির' জন্য এবার মারাত্মক নয়, বরং লক্ষণগুলো তুলনামূলক মৃদু।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক ড্যানি আল্টম্যান বলেছেন, 'যদিও এখন পর্যন্ত পুনরায় সংক্রমণের মাত্র শখানেক কেস সনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের সাথে আলোচনায় আমরা পরামর্শ দিয়েছি যে, এ সংখ্যা আমাদের ধারণার চাইতে অনেক বেশি'।
যদিও প্রথমবার সংক্রমণের অবশিষ্ট অ্যান্টিবডিগুলির কারণে দ্বিতীয় দফায় রোগের উপসর্গ অতটা মারাত্মক হবে না, ব্রাজিলে করা একটি নতুন গবেষণা বিপরীত এবং উদ্বেগজনক প্রমাণ দিয়েছে বলে মত দিলেন অধ্যাপক আল্টম্যান।
সে গবেষণায় দেখা গেছে একই কেন্দ্রের ৩০ জন স্বাস্থ্যকর্মী দ্বিতীয়বার ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল - এবং তারা প্রথমবারের চাইতেও অনেক বাজেভাবে ভুগেছিল। তাদের এ সংক্রমণের হার পুনরায় মোট সংক্রমণ হারের ৭ শতাংশ।
"এমনকি প্রথমবার মৃদু সংক্রমণে ভোগা একজন , দ্বিতীয়বার সংক্রমণে মৃত্যবরণ করে", জানান আল্টম্যান ।
এটি বোঝা মুশকিল যে, রোগের উপসর্গে যেভাবে বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে তা কি ভাইরাসের ধরনে পরিবর্তন আসার জন্যে নাকি আক্রান্ত মানুষের দেহে সেভাবে অ্যান্টিবডি বকশিত না হবার জন্য।
জানুয়ারিতে প্রকাশিত পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) সাইরেন রিপোর্টে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট অ্যান্টিবডিগুলি কমপক্ষে পাঁচ মাসের জন্য শতকরা ৮৩ভাগ সুরক্ষা সরবরাহ করে।
গবেষকরা ৬,৬১৪ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৪৪ জনের ভেতর কোভিড দ্বারা পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাব্য লক্ষণ খুঁজে পান।
আরেকটি সমীক্ষা থেকে পাওয়া যায়, অ্যান্টিবডি থেকে সৃষ্ট এ সুরক্ষা হার ৮৮ শতাংশ যা কোভিড সংক্রমণ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য ব্যক্তিকে নিরাপদ রাখে।
- সূত্রঃ স্কাই নিউজ