করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা বিভাগের ৭০ হাজার খামারি প্রণোদনা পাচ্ছেন
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা বিভাগের ৭০ হাজার ১৬১ জন পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারি সরকারের প্রণোদনা পাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারের মালিকরা এক হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা পাবেন জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত করোনা মহামারীর কারণে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া, ঝিনাইদহের হরিণাকু, কালিগঞ্জ, যশোরের অভয়নগর, শার্শা, বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোংলা, রামপাল, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা, কলারোয়া ও কালিগঞ্জ উপজেলার ডেইরি ফার্মের মালিকরা প্রতি লিটার গরুর দুধ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে। সাত মাসের মধ্যে ছোট-বড় খামারগুলোতে গড়ে এক লাখ টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে। মুরগির ডিম প্রতি পিস পাঁচ টাকা, একদিন বয়সী সোনালি, কক ও ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পাঁচ টাকা এবং ব্রয়লার প্রতি কেজি নব্বই টাকা দরে বিক্রি হয়। ফলে খামারিদের উৎপাদন খরচ উঠেনি। এতে খুলনা বিভাগের ১০শতাংশ খামার মালিক পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামারিদের প্রণোদনার ঘোষণা রয়েছে সরকারের।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্মগুলোকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারের মালিকরা এক হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা পাবেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, খুলনা অঞ্চলে এক লাখেরও বেশি পোল্ট্রি ও গবাদী পশুর খামারি উৎপাদনে রয়েছে। তার মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৭০ হাজার ১৬১জন খামারিকে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রণোদনা পাবে এ রকম তালিকাভুক্ত খামারিদের মধ্যে খুলনা জেলায় ৭ হাজার ২০২জন, বাগেরহাট জেলায় ৯ হাজার ৬১ জন, সাতক্ষীরা জেলায় ১০ হাজার ২৩৪ জন, যশোর জেলায় ৮ হাজার ৭৭১ জন, ঝিনাইদহ জেলায় ১২ হাজার ৬৪৬ জন, মাগুরা জেলায় ৭ হাজার ১৬৪ জন, নড়াইল জেলায় ১ হাজার ৮৫১ জন, কুষ্টিয়া জেলায় ৮ হাজার ৭ জন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩ হাজার ৫৩১ জন ও মেহেরপুর জেলায় ১ হাজার ৬৯৪ জন।
বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের খলিসাবুনিয়া গ্রামের মুরগির খামারি স্বপন রায় জানান, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ৫শ মুরগি ডিম দিয়েছে। লোকসানের কারণে ২২৫ পিস মুরগি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। সরকারি পর্যায়ে ১ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনায় ক্ষতি পুষিয়ে খামারগুলো পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে না।
দাকোপ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার রায় জানান, দাকোপ উপজেলার ২ হাজার ৬০০ খামারির মধ্যে ৩৯৬ জনকে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উপজেলার বানিশান্তা, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব, তিলডাঙ্গা, সুতারখালী, কামারখোলা, পানখালী ও পৌর এলাকার খামারিরা করোনাকালীন সময়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় সহকারী পরিচালক ডা. মো. শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয় প্রণোদনার উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পরিচয়পত্র ও ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টে পাঠানো হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাবেন তারা।