সৃজিতের বার্তা পেয়ে ভেবেছিলাম কেউ ইয়ার্কি করছে: বাঁধন
সম্প্রতি কলকাতা থেকে একটি ওয়েব সিরিজের শুটিং শেষ করে দেশে ফিরেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের থ্রিলার উপন্যাস 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি' অবলম্বনে কলকাতার পরিচালক সৃজিত মুখার্জি নির্মাণ করছেন এই ওয়েব সিরিজ। এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের এই অভিনেত্রী।
যদিও এই সিরিজে বাংলাদেশ থেকে আরও অনেকেরই অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁধনই হয়ে ওঠেন উপন্যাসের শক্তিশালী ও প্রধান চরিত্র মুসকার জুবেরী।
প্রথমবার সিরিজে অভিনয়, তাও কলকাতার জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে! জানতে চাই সেই অভিজ্ঞতা।
বাঁধন বলেন, 'আমার সঙ্গে সৃজিতের কোনো যোগাযোগ বা কথা হয়নি। পরিচালক হিসেবে তাকে তো চিনতাম। তার নির্মাণ দেখেছি। তিনি আমাকে চিনতেন কি না, জানি না। করোনার শুরুর দিকে একদিন তিনি আমাকে আমার হোয়াটস অ্যাপে নক দিলেন। একটা ইন্ডিয়ার মোবাইল নম্বর এবং সৃজিতের পরিচয় দেওয়া। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো সৃজিতের নাম ধরে কেউ প্রাঙ্ক করছে আমার সাথে। এ কারণে খুব বেশি গুরুত্ব দেইনি। পরে তিনি আমাদের দেশের প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। মানে পরদিন শাকিল ভাই আমাকে সকাল বেলা একটা কনফারেন্স কলে সৃজিতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে ও কথা বলিয়ে দেন।'
সৃজিত উপন্যাসটার কথা বলে ওই উপন্যাসের প্রচ্ছদের ছবি পাঠান বাঁধনকে। তাকে বলেন, ওই গেটাপের একটা ছবি দিতে। যেটা আসলে মুসকান জুবেরীর গেটআপ। বাঁধন ঠিকঠাক মতো পাঠিয়ে দেন। তারপর অপেক্ষা।
অবশ্য ওই রাতেই উপন্যাসটি পড়া শুরু করেন বাঁধন। তারপর কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি ঢুকে যান অনলাইন রিহার্সালে। সেটা চলে টানা সাত মাস।
শুটিংয়ের জন্য বাঁধন কলকাতায় যান ১১ ডিসেম্বর। সেদিনই প্রথম দেখা সৃজিত ও তার টিমের সঙ্গে। পরদিন হয় লুক সেট। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে ছবি তোলা ও কস্টিউম ট্রায়াল।
বাঁধন সেদিনই প্রথম জানতে পারেন, এই সিরিজে তার সহশিল্পীর তালিকায় আছেন রাহুল বোস ও অঞ্জন দত্ত। এটাও তার জন্য একটা মুগ্ধ হওয়ার মতো ব্যাপার। সঙ্গে ভয়ও: এতসব গুণী শিল্পীর সঙ্গে কি কাঁধে কাধ মিলিয়ে অভিনয় করতে পারবেন তো?
ততদিনে বাঁধন চরিত্রে ঢুকে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি মুসকান হতে পারব বা এই চরিত্রে অভিনয় করতে পারব- কখনো ভাবিনি। এটা একটা নারী প্রধান সিরিজ। তাই ভয়টা ছিল। আসলে, সিনেমায় বা সিরিজে সাধারণত মেয়েদের চরিত্রে খুব একটা শেড দেখানো হয় না। হয় আদর্শ নারী, না হয় কুটনি। মাঝামাঝি কিছু নেই। এই চরিত্রটা নানা শেডের।'
তিনি আরও জানান, ১৬ ডিসেম্বর বর্ধমানের দশঘোরায় একটি রাজবাড়িতে শুরু হয় শুটিং। সত্যজিৎ রায়ের 'ঘরে বাইরে'র শুটিংও হয়েছিল ওই বাড়িতে। এটাকে মুসকান জুবেরির বাড়ি হিসেবে দেখানো হবে।
প্রথম দিনের শুটিংয়ে করতালি পেয়েছেন বাঁধন। অবশ্য এর কৃতিত্ব সৃজিতসহ ইউনিটের সবারই। ওই বাড়িতেই বাঁধনের অধিকাংশ শুটিং হয়।
বর্ধমানের পর শুটিং হয় কলকাতায়। অঞ্জন দত্ত থেকে শুরু করে অনেকেই যোগ দেন সেখানে। তারপর সিকিমে। সেখানে বেশ প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে শুটিং শেষ করতে হয় তাদের।
পুরোপুরি শুটিং শেষ করে আসা বাঁধন বললেন, 'আমার সঙ্গে অনেক বড় বড় তারকা ছিলেন, এ কথা সত্য। কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়নি, তারা বড় তারকা। তারা অত্যন্ত আন্তরিকতা দিয়ে, সহশিল্পীর সুবিধা-অসুবিধা বুঝে কাজ করেন। বড় শিল্পী হওয়ার এটাই বোধহয় বড় গুণ।'
আপাতত দেশে ফিরলেও শিগগিরই ডাবিং করতে আবার কলকাতায় যাবেন বাঁধন। সেটা শেষ হলেও আপাতত কাজ শেষ। এখন অপেক্ষা, কবে নাগাদ সিরিজটি রিলিজ হয়।
আলাপ শেষের আগে বাঁধন বললেন, 'একটা সময় ছিল যখন আমি কাজ করার জন্য করতাম। হয়তো টাকার জন্য বা অকারণেই! কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। আমি জীবনবোধ সম্পর্কে জেনেছি, বুঝেছি। তাই এখন আর চাইলেও সব ধরনের কাজ করতে পারি না। করতে চাইও না। এখন বুঝি, কোনটা আমার জন্য করা জরুরি, কোনটা নয়। এখন আসলে অভিনয়টাকে বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছি। এ কারণে সামনের কাজগুলো কেমন হবে, সময়ই বলে দেবে।'