সরকারের প্রতি বাণিজ্যিক কর হ্রাসের তাগিদ দিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা
বাংলাদেশে কর্পোরেট করহার বেশি উল্লেখ করে- তা ধীরে ধীরে কমিয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন- ফরেন ইনভেস্টর'স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি- এফআইসিসিআই।
পাশাপাশি কোম্পানির প্রচার ব্যয়ের ক্ষেত্রে দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া, রয়্যালিটি ও টেকনিক্যাল ফি বাবদ ব্যয় সীমা কমিয়ে দেয়াসহ আয়কর আইনের একগুচ্ছ বিষয়ে সংশোধনী চেয়েছে সংগঠনটি।
গত মঙ্গলবার রাজধানীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন এফআইসিসিআই প্রেসিডেন্ট ও বার্জার পেইন্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুপালী চৌধুরী। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এনবিআর।
এনবিআর সম্মেলন কক্ষে ওই সভায় রুপালী চৌধুরী মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর এবং শুল্ক খাতে আলাদা আলাদা সংশোধনী প্রস্তাব তুলে ধরেন।
রুপালী চৌধুরী বলেন, আমার মাধ্যমে দুটি বিদেশী কোম্পানির বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে। ওই একই কোম্পানি ভারতেও বিনিয়োগ করেছে। ভারতে পরিচালনা ও কর বাবদ ব্যয় আমাদের চেয়ে অনেক কম। ফলে আমাদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিদেশী কোম্পানিগুলো সবই কমপ্লায়েন্স উল্লেখ করে নিয়মিত করদাতাদের বাণিজ্যিক করহার কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
রুপালি চৌধুরী বলেন, গত বছর তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৩ শতাংশ করা হয়েছে। এবার তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য- তা ২ শতাংশ কমানো উচিত।
বর্তমানে আটটি ক্যাটাগরির কোম্পানির কাছ থেকে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর্পোরেট কর আদায় করা হয়।
বাংলাদেশে কর্পোরেট করহার প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। ভারতে যা ৩০ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ। আফগানিস্তানে ও ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ। এছাড়া, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৭ শতাংশ বাণিজ্যিক কর বিদ্যমান রয়েছে।
গত বাজেটে কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোট টার্নওভারের দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়। রয়্যালিটি ও টেকনিক্যাল এক্সপেন্সের ক্ষেত্রেও একই বিধান যোগ করে এনবিআর। উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর বাজার গবেষণা ও প্রচারণায় অনেক খরচ করতে হয় উল্লেখ এর সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন রূপালী চৌধুরী।
এফআইসিসিআই এর উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- ভিত্তিমূল্যের পরিবর্তে লেনদেন মূল্যের ওপর করারোপ করা এবং কাঁচামাল আমাদানির ক্ষেত্রে অগ্রীম কর তিন শতাংশে নামিয়ে আনা। এছাড়া, এক অনুমোদনে দেশের যেকোনো বন্দর দিয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
ডিজিটাল লেনদেন বাড়ালে কর আহরণ বাড়বে উল্লেখ করে, নগদ অর্থ লেনদেনের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসির এজাজ বিজয়।
ব্যাংকে ক্যাশ ডিপোজিট একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি হলে তার ওপর করারোপের প্রস্তাবও দেন তিনি।
এসব প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তবে দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতে কর আদায় বাড়ানোর মাধ্যমেই ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার কথা বলেন তিনি।
আবু হেনা রহমতুল মুনিম বলেন, করোনার আক্রমনের পর আমাদের ধারণা হলো- ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ হবে না। অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য কর আহরণও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা চাইছেন ব্যবসা করতে, আর আমরা চাই কর আহরণ করতে। দুটির মধ্যে সমন্বয় করেই আপনাদের সুবিধা দিতে হবে।