প্রবল ‘বুলবুল’ এখন দুর্বল, বিপদ সংকেত প্রত্যাহার
উপকূল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে ‘প্রবল’ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এখন তা পরিণত হয়েছে গভীর স্থল নিম্নচাপে। ফলে মহাবিপদ সংকেত তুলে নেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল দশটার দিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে সংস্থাটির পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য
তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এই মুহূর্তে একেবারেই দুর্বল। এটি ছিল একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। শুরুর দিকে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। কখনো কখনো ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। সেই জায়গা থেকে এখন বাতাসের গতি নেমে এসেছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার।”
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে শনিবার সকাল থেকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সেই সংকেত নামিয়ে ফেলে রোববার সকাল থেকে সবগুলো বন্দরকেই তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে তারা।
আবহাওয়াবিদ শামসুদ্দিন বলেন, “বুলবুল এখন আর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানে নেই। এমনকি এটি এখন আর ঘূর্ণিঝড়ও নয়। এটি একটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।”
“স্থল নিম্মচাপটি অবস্থান করছে বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও খুলনা এলাকায়। আমরা স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছি। ১০০ কিলোমিটার বেগের ঝড় এসে একেবারে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে তেমন আশঙ্কা আর নেই। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা লাগতে পারে।”
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনানা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
নিম্নচাপটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে হতে এক সময় মিলিয়ে যেতে পারে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়া নিয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরে প্রথম আঘাত হানে। তবে সুন্দরবনের বনাঞ্চলের বাধার কারণে তা ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ে দুজনের মৃত্যুর খবর
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর সংবাদ এসেছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়ে পটুয়াখালীতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. সারোয়ার হোসেন জানান, শনিবার রাত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের উত্তর রামপুর গ্রামে ঘরের ওপর একটি রেইনট্রি গাছ উপড়ে পড়লে হামেদ ফকির নামে একজন বৃদ্ধ মারা যান।
খুলনার দাকোপ উপজেলায়ও ঝড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। প্রমীলা মন্ডল নামে ওই নারী স্থানীয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকলেও রাত ১০টার দিকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যেতে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই নিজের ঘরে যান। তাঁর ঘরের ওপর একটি নারিকেল গাছ উপড়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভোলার লালমোহন এবং চর ফ্যাশনে ১৫ জন আহত হবার খবর এসেছে। এছাড়াও ঝড়ের দাপটে অন্তত ২২টি ঘর উপড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।