চলতি বছরেই বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির অবস্থানে ফিরতে পারে ভারত
কোভিডের ব্যাপক সংক্রমণে মারাত্মক প্রভাবিত হয় ভারতের অর্থনীতি, আড়াই দশকের মধ্যে প্রথমবার প্রবৃদ্ধির পথ থেকে সঙ্কোচনে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি। তবে চলতি ২০২১ সালের মধ্যেই বিপুল গতি নিয়ে সেখান থেকে উত্থানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলা আগামী অর্থবছরে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১২.৬ শতাংশের উচ্চগতির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করবে, বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে বিকশিত অর্থনীতিগুলোর জোট- অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)। গতকাল মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সংস্থাটি তাদের অনুমানের কথা জানায়।
আভাস অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হলে, চীনকে হঠিয়ে বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল দেশের শিরোপা ফিরে পাবে ভারত। পঞ্জিকাবর্ষ অনুসারে ২০২১ সালে তার ফলে ৭.৮ শতাংশের জিডিপি স্ফীতি লাভ করবে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল রাষ্ট্রটি। ২০২০ সালের সামগ্রিক মন্দা কোনরকমে ঠেকানোর পর যা হবে একটি সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রা।
২০২০ সালে শেষ তিন মাসে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করে ভারত। সাময়িক এই উত্তরণেই মন্দার আবর্ত এড়ানো সম্ভব হয়। তারপরও, ২০২০ সালের সামস্টিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় ৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে অর্থনীতি।
মঙ্গলবার ওইসিডি তাদের পূর্বাভাসে প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলো নিয়ে যে পূর্বাভাস দেয়, তাতে ছিল বৈশ্বিক হালচিত্র সম্পর্কিত বড় কিছু পরিবর্তন। সর্বশেষ তথ্যের আলোকে ইতোপূর্বে দেওয়া অনেক আভাসও সংশোধন করে সংস্থাটি। এসব পরিবর্তনের পেছনে প্রধান অবদান ছিল, বিভিন্ন দেশে চলমান জাতীয় কোভিড টিকাদান কর্মসূচি এবং বড় আকারের সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা।
প্যারিস ভিত্তিক সংস্থাটির মতে, সাম্প্রতিককালে ভাইরাস বিস্তারে রোধে অধিকাংশ দেশের নেওয়া পদক্ষেপ তাদের অর্থনীতিতে আগের মতো তীব্র নেতিবাচক চাপও ফেলছে না। "মূলত, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি সিদ্ধান্তগুলো যে সাবধানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে- এর মধ্য দিয়ে সেটাই উঠে আসে।" তাছাড়া, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারাও করোনা স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলা শিখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ফলে ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করেছে ওইসিডি, যা তাদের ডিসেম্বরে দেওয়া পূর্বাভাসের চাইতে এক শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর অবস্থান:
ওইসিডির সাম্প্রতিকতম আভাস অনুসারে, বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর ৬.৫ শতাংশ বাড়বে। ডিসেম্বরে এর চাইতে তিন শতাংশ পয়েন্ট কম অনুমান করা হয়। মার্কিন অর্থনীতির চাঙ্গাভাবের জন্য মূল কৃতিত্ব দেওয়া হয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজকে।
ইউরোপে যুক্তরাজ্য ছাড়া অন্যান্য দেশে টিকাদানের গতি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশ ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছে। তাই সেখানে পর্যায়ক্রমে উত্তরণের অনুমান করছে ওইসিডি। আর ইউরো জোনের ১৯ দেশে পণ্য উৎপাদন বাড়বে ৩.৯ শতাংশ। ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের চাইতে মহামারির অভিঘাতে বেশি ক্ষতির শিকার হওয়া সত্ত্বেও, টিকা কর্মসূচির কল্যাণে যুক্তরাজ্য লাভ করবে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
অবশ্য, মহামারির মধ্যে করোনা জীবাণুর নিত্যনতুন অভিযোজনের হুমকির মুখে সামগ্রিক পূর্বাভাসটি অনেক অনিশ্চয়তার ঝুঁকিতে ঘেরা। এজন্য একেক দেশে টিকাদানের একেক রকম গতিকে প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করে ওইসিডি।
বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে, শক্তিশালী উত্তরণের সাথে সাথে পণ্যমূল্যের দরেও আগুন লাগবে, যেকারণে চাহিদার পরবর্তী জোয়ার গতি হারাবে এবং আবারও দুর্বল হবে অর্থনীতি। তাই বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতির চলমান প্রবণতায় বাজার উদ্বেগকে আমলে নিয়ে সংস্থাটি স্বীকার করে যে, কিছু কিছু খাতে ইতোমধ্যেই তেমন চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
"বিশেষ করে চীন থেকে প্রত্যাশার চাইতেও দ্রুত ভোক্তা চাহিদার উত্তরণ এবং তার সঙ্গে সরবরাহ সঙ্কট মিলে খাদ্য এবং ধাতুর মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দরও ফিরে যাচ্ছে ২০১৯ সালের গড় মূল্যের স্তরে।"
তবে সামস্টিক অর্থনীতি ও চাকরির বাজার এখনও বেশ দুর্বল অবস্থানে আছে জানিয়ে, তার উপর গুরুত্বারোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে শিথিল মুদ্রানীতি ধরে রাখার সুপারিশ করেছে ওইসিডি। মুদ্রানীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও, এপর্যন্ত আসা উত্তরণের পেছনে এর সহায়ক ভূমিকাকে উল্লেখ করা হয়।
সংস্থাটির মতে, "অর্থনীতির পুনরুত্থানের সময় দেখা দেওয়া সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে মুদ্রানীতিতে এখনই বড় কোনো পরিবর্তন আনার দরকার নেই।"
- সূত্র: সিএনএন