যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো ১০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কিনতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরো ১০টি ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিন কিনতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেস রেলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে আরো ৪০টি ইঞ্জিন পাঁচটি পৃথক লটে কেনার চুক্তি করা হয়েছিল প্রগ্রেস রেলের সাথে যার প্রথম লটটি ৬ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। ১২৩ কোটি ৫ লাখ টাকায় ইঞ্জিনগুলো কেনার যুক্তি হয় তখন। নতুন ইঞ্জিনগুলো একই দামে কিনতে চায় বাংলাদেশ।
গতকাল রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র্রদূত আর্ল মিলার সাক্ষাৎ করতে গেলে ইঞ্জিন ক্রয় ও রেলওয়ে খাতে নতুন বিনিয়োগের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। দূতাবাসের ইকোনমিক অফিসার জেফরি ডার্কস এবং রেল সচিব সেলিম রেজাসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বৈঠকে অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে
এদিকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে বৃহত্তর বিনিয়োগ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগ আশা করছেন রেলমন্ত্রী।
এর আগে কোরিয়ান কোম্পানি হুন্দাই-ডোডেম এর কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ১০০ টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কিনেছে বাংলাদেশ। এ ইঞ্জিনগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেস রেলই তৈরি করছে। হুন্দাই ডোডেম সেগুলো সমন্বয় করছে।
এছাড়া রেলওয়ে ট্র্যাক সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে সম্প্রতি। এসব খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে রেলওয়ের পক্ষ থেকে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রও ইতিবাচক আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে রেলমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
যাত্রীবাহী কোচ ও লোকমোটিভ কারখানা নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান রেলমন্ত্রী।
"যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেলওয়ের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে", বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন রেলমন্ত্রী।
মার্কিন কোম্পানি প্রগ্রেস রেলের কাছ থেকে ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "হুন্দাইয়ের কাছ থেকে কেনা ইঞ্জিনগুলো মূলত প্রগ্রেস রেলই তৈরি করবে। এখানে (হুন্দাই) এসে শুধু এসম্বল হবে। সে হিসাবে মোট ১৪০টি ইঞ্জিন একই কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হচ্ছে যা বাংলাদেশের রেলবহরে যুক্ত হবে"।
গত সেপ্টেম্বরে ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন দেশে এসেছে।
"ট্র্যাক, সিগনেলিং সিস্টেম, কারখানাগুলো আধুনিকায়নে যেসব সুযোগ সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে আমাদের এখানে কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। এর আগে আমি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেখে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা রেল ব্রিটেন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি । তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো না। এখন আমাদের উন্নয়নের ধারায় তারা যুক্ত হতে চায়। এগুলো নিয়ে কথা বলেছি। কিভাবে এ খাতের আরও ভাল ব্যবস্থাপনা করা যায়; প্রযুক্তি, তত্ত্বাবধান, প্রশিক্ষণ এসব বিষয়ে কথা হয়েছে।"
"আমাদের ট্র্যাকগুলো সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে করতে চাচ্ছি। জেলা পর্যায়ে রেললাইন সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসতে পারি, সে ব্যাপারে কথা হয়েছে," বলেন তিনি।
হুন্দাইয়ের পাঠানো ইঞ্জিনে কারিগরি ত্রুটির বিষয়ে তদন্ত করবে কমিটি
হুন্দাই ডোডেমের কাছ থেকে ১০টি ইঞ্জিন আনা হয়েছে। তবে সেগুলোতে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়েছে। কিভাবে এমনটি হলো এ বিষয়ে জানতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, "মিটারগেজ ইঞ্জিন টিএ ৯ অল্টারনেটর দিয়ে চলে। যারা চুক্তিটি করেছে তারা সেখানে টিএ ১২ উল্লেখ করেছে। টিএ ১২ ব্যবহৃত হয় ব্রডগেজে"।
"রেলওয়ের কোন পর্যায়ে এমন সিদ্ধান্ত নেই যে মিটারগেজ ইঞ্জিন কিনে প্রয়োজনে সেগুলো ভবিষ্যতে ব্রডগেজে উন্নীত করা হবে। যদি থাকতো তবে আরো যে মিটারগেজ ইঞ্জিনগুলো কিনছি সেগুলো টিএ ১২ অলটারনেটর থাকতো।"
মন্ত্রী বলেন, "টেকনিক্যাল কমিটি করে দিয়েছি। তারা বের করবে ত্রুটিটা কোথায় ছিল। পিডি নিজের সিদ্ধান্তে কিছু করতে পারেন না। রেলে একটা কর্তৃপক্ষ আছে। প্রকল্পে একজন পিডি নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু পিডির উপর তো আরেকটি কর্তৃপক্ষ থাকে। তাদের সাথে বুদ্ধি পরামর্শ করে কাজ করতে হয়।"
"যদি পিডির ভুল হয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যদি কেউ ক্ষতি করার জন্য করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেকনিক্যল কমিটি এগুলো খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিবেন", জানান মন্ত্রী।