‘আমার আম্মু কোথায়?’
মায়ের সঙ্গে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিল আড়াই বছরের শিশু মাহিমা। এক দুর্ঘটনায় মা-মেয়ের বাড়ি ফেরার এই আনন্দযাত্রা পরিণত হলো শোকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষে যে ১৬টি প্রাণ ঝরে গেছে তাঁদেরই একজন মাহিমার মা কাকলী। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মাথায় সেলাই আর ব্যান্ডেজ নিয়ে নিজের মাকে খুঁজছেন শিশু মাহিমা। জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমার আম্মু কোথায়?’
দুর্ঘটনাস্থল থেকে শিশু মাহিমাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মাহিমার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও তার স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
মাথায় ব্যান্ডেজ পড়া শিশুটি চারদিকে মানুষজন দেখে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে। পরবর্তীতে জানা যায় মা কাকলীর সঙ্গে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায় ফিরছিল মাহিমা। তার বাবা মাঈন উদ্দিন একটি হোটেলে কাজ করেন।
ছোট্ট শিশু মাহিমা এখনও জানে না তার মমতাময়ী মা আর বেঁচে নেই। জানেনা, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা আরও ১৬ জনের মতো কেড়ে নিয়েছে তার মাকেও। তাকে কোলে নিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে আর হয়তো কেউ গাইবে না ঘুমপাড়ানি গান!
নিহত কাকলীর মরদেহ নিতে এসে তাঁর স্বামী মাঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, সিলেটের শাহজালাল (র.) মাজারে মানত ছিল তাদের। সেই মানত পূর্ণ করতে কাকলী ও মাহিমাসহ তাদের কয়েকজন স্বজন সিলেটে যান। সেখান থেকেই উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ফিরছিলেন তারা। সেই ফেরার পথেই দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মারা যান এবং সন্তান মাহিমা আহত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন জানান, মাহিমার কপালে সেলাই লেগেছে। তার কপালের বাম পাশ থেকে মাথার পেছন পর্যন্ত অংশ ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২) ভোররাত পৌনে তিনটার দিকে কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন দুই ট্রেনের শতাধিক যাত্রী। আহতদেরকে ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুর্ঘটনার জন্য তুর্ণা নিশীথার লোকোমোটিভ মাস্টারের সিগনাল ভঙ্গ করার বিষয়টিকে দায়ী করেন।
মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরীও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তুর্না নিশীথার আউটার ও হোম সিগনাল অমান্য করার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে, ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার) তাসের উদ্দিন এবং সহকারী চালক (সহকারী লোকো মাস্টার) অপু দে ও গার্ড আব্দুর রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।