কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সন্দেহ
চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কৃষি ঋণ বিতরণ গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ঋণ আদায় ও সামান্য পরিমাণে খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া কৃষি ও অকৃষি গ্রামীণ ঋণ পরিস্থিতি সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আট মাসে ঋণ বিতরণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরে বাড়ালেও গেল অর্থবছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে আছে ব্যাংকগুলো।
গেল অর্থবছরে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে ৬২.৫৬ শতাংশ বা ১৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছে ৬১.৫৪ শতাংশ বা ১৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজেনস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চলতি অর্থবছরে করোনার প্রভাব, বন্যাসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ হয়নি। তবে গেল অর্থবছরের প্রথম আট মাসেও মোট লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি চলতি অর্থবছরের মতোই ছিল। এই প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে, অর্থবছর শেষে বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
চলতি অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৪.৫ শতাংশ বিতরণ করবে সরকারি তিনটি ব্যাংক: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও সোনালী ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের জন্য বিকেব'র ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার কোটি টাকা, রাকাবের ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণ হার যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ, ৭২.৫ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কৃষিখাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে শস্য উৎপাদনের জন্য। এরপরই আছে প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি এবং মৎস চাষ। সবচেয়ে কম ঋণ বিতরণ হয়েছে কৃষি যন্ত্রাপতি কেনায়।
কৃষির বাইরে গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনের জন্য বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
কৃষকরা আগের চেয়ে যেমন ঋণ বেশি নিয়েছেন, তেমন ফেরতও দিয়েছেন বেশি। ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা ভালো উদাহরণ তৈরি করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি ঋণ পরিশোধ করেছেন কৃষকরা।
এ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরবর্তী ধান ও অন্যান্য পণ্যের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আগের চেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছেন।
ঋণ বিতরণ ও আদায় বাড়ার পাশাপাশি কৃষিখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত '৪% সুদে বিতরণ করা বিশেষ কৃষি ঋণ' বিষয়ক এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুরযোগে ফসল নষ্ট হওয়া কিংবা ফসলের যথাযথ দাম না পেলেই কৃষকরা খেলাপি হয়ে থাকেন।