চট্টগ্রাম বন্দরে কার্যক্রম বিঘ্ন, ধর্মঘট দীর্ঘস্থায়ী হলে কন্টেইনার জটের আশঙ্কা
নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সারা দেশ ব্যাপী ডাকা ধর্মঘটের কারণে সকাল ৬ টা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) থেকে ২,০০০ রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। সেই সাথে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য বাহী ১,০০০ কন্টেইনারও বন্দর থেকে আইসিডিতে আসছে না।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারি নিতে কিংবা জাহাজীকরণের জন্য পণ্য নিয়ে কোন ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করছে না। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বন্দরের সকল জেটিতে পণ্য উঠানামার কাজ স্বাভাবিক আছে। ধর্মঘট দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্দরে ডেলিভারী সহ অপারেশনাল কাজে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে ট্রাক, কভার্ডভ্যান এবং লরি ছাড়াও রেলপথ ও নৌ- পথে পন্য পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো’স এসোসিয়েশনের (বিকডা) সেক্রেটারী রুহুল আমিন শিকদার বলেন, "বুধবার সকাল থেকে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত কোন গাড়ি চলছে না। প্রতিদিন রপ্তানি পণ্য আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) থেকে ১,৮০০ থেকে ২,০০০ কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করে। আমদানিকৃত ১,০০০ কন্টোইনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিতে আসে। এছাড়াও প্রতিদিন ১,৭০০ খালি কন্টেইনার বন্দর থেকে আইসিডিগুলোতে আসা যাওয়া করে। ধর্মঘটের কারণে এখনো পর্যন্ত আইসিডি থেকে কোন পণ্য বন্দরের উদ্দেশ্যে বের হয়নি। বন্দর থেকেও আসেনি কন্টেইনার।"
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে ৫,০০০ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারি এবং জাহাজীকরণের জন্য রপ্তানি পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে। এছাড়া দিনে অন্তত ২০ ফুট সাইজের ৭,০০০ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে ট্রাক কাভার্ড ভ্যান পরিবহন মালিক সমিতির অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা ধর্মঘট দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের আমদানি রপ্তানির ৯০ শতাংশ কাজ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ফলে বন্দর থেকে ট্রাক ও কার্ভাডভ্যানে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। আবার বিভিন্ন কারখানা জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও এখানে আসে কাচাঁমালও। কিন্তু এ ধর্মঘটের কারণে বন্দরে যেমন কনটেইনার জট হবে। তেমনি আমদানি রপ্তানিতে স্থবিরতা দেখা দিবে। যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। সাথে সাথে বাড়বে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দামও।”
সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়ারিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী সরওয়ার আলম খান জানান, শুল্কায়নের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও ধর্মঘটের কারণে পণ্য গ্রহণ করতে পারছি না। এতে বন্দরের এবং শিপিং এজেন্টের জরিমানা গুনতে হবে। শীঘ্রই ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ড ভ্যান এন্ড মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপ এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেড়ারেশনের সভাপতি মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবীতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় ভাবে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। মালিক এবং শ্রমিক সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত রাখাসহ ৯ দফা দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান মঙ্গলবার বলেন, "আমাদের শ্রমিকরা ২-৩ দিন আগে থেকেই আন্দোলন করছেন। তবে আগামীকাল (বুধবার) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে সব ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান এবং কাভার্ডভ্যানে করে কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেল পরিবহনে কর্মবিরতি থাকবে।"
তার দাবি, সড়ক পরিবহন আইন স্থগিতের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিকদের সাথে সামঞ্জস্য করে জরিমানার বিধান ও দণ্ড রেখে একটি যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
"ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা পুরো আইন প্রত্যাখ্যান করছেন না। কিছু ধারার সংশোধন চাচ্ছেন। আইনে সব ধারা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার আশ্বস্ত করলেও পরে সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণেই আমাদের কর্মসূচি," যোগ করেন।
এদিকে, সোমবার থেকে দেশের কয়েকটি জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বাস বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেই, বাস চলবে। ‘বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জেলায় বাস বন্ধ রাখার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তাদের সাথে কথা বলছি যাতে বাস চালু রাখেন।’