পরিবহন ধর্মঘট: অস্ত্র তাদের পোড়া মবিল
রাজীব কুমার দে নামে এক ব্যক্তি অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। নগরীর প্রবেশপথ সিটি গেইট এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন যুবক তাঁকে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেন। গাড়ি থামানোর সাথে সাথেই ওই দলটি রাজীবের মুখে এবং গাড়িতে পোড়া মবিল মেখে দেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিব্রত রাজীবের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “ওরা আন্দোলন করছে করুক। নিজেদের গাড়ি বন্ধ রেখেছে রাখুক। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ লোকের সাথে এমন কাজ করলো কেনো? আমাদের অপরাধটা কী? আইন তো আমরা তৈরি করিনি।”
সম্প্রতি কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের সংস্কারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ব্যক্তিগত গাড়ির চালক বা যাত্রীদের থামিয়ে তাঁদের মুখে পোড়া মবিল মেখে দিচ্ছেন, এমন চিত্রই দেখা যায় সকাল থেকে। উশৃঙ্খল কিছু আন্দোলনকারীকে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করতেও দেখা যায়।
কোথাও কোথাও গাড়ি চালকদের ওপর চড়াও হন তারা। পাশাপাশি গাড়িতেও লেপ্টে দেন পোড়া মবিল। গণপরিবহন থামিয়ে চালকদের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নিয়ে যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে দেন ধর্মঘট পালনকারীরা। সিটি গেট থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সড়কে পাশে পোড়া মবিল, ফোম নিয়ে শত শত ধর্মঘটকারীকে অবস্থান করতে দেখা যায় সকাল থেকেই।
অন্যদিকে ধর্মঘট পালনকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় অলংকার মোড়, এ কে খান মোড় এলাকায় কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়।
জরুরী ব্যবসায়িক কাজে নগরে আসার পথে সিটি গেট এলাকায় ধর্মঘটকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। ধর্মঘট পালনকারীরা তার মুখে এবং তার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে মবিল লাগিয়ে দেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “পরিবহন শ্রমিকরা নিজেদের গাড়ি বন্ধ রেখে আন্দোলন করছে। তাতে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু তারা আমাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করছে। এগুলো অপরাধ। কিন্তু আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
চট্টগ্রাম আন্তঃ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারী ট্রাক শ্রমিকরা দূরপাল্লার বাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। অলংকার, পাঁকা রাস্তার মাথা, নিজামপুর এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর এবং চালকদের মারধর করছে তারা।
“তারা বাস থেকে চালক ও যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে উত্তরমুখী ঢাকসহ সকল রুট এবং কক্সবাজার রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি আমরা।”
নিরাপদ সড়ক চাই- চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজিব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আইন নিয়ে সমস্যা থাকলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। এতে সমাধানের সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। মানুষকে জিম্মি করে তারা সড়ক অবরোধ করছে। দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করছে। এ ধরনের অন্যায় অবরোধ দেশের আইন-শৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জ করে। এজন্য যারা এ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।”