কোভিড সুরক্ষা পণ্যের চাহিদা, যোগান ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি
কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত সপ্তাহ থেকেই বেড়েই চলেছে ফেসমাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, থার্মোমিটার ও অক্সিমিটারসহ বিভিন্ন ধরনের কোভিড-১৯ সুরক্ষা পণ্যের মূল্য।গত তিন দিনে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দৈনিক ৫০ জনেরও বেশি।
তবে গত বছরের মতো এবারও আতঙ্কিত হয়ে মাত্রাছাড়া কেনাকাটার প্রবৃত্তি দেখা যায়নি ক্রেতাদের মধ্যে। উৎপাদনকারী, আমদানিকারক এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, সরবরাহ দেওয়ার মত যথেষ্ট কোভিড সুরক্ষা পণ্য তাদের কাছে মজুদ রয়েছে।
ফেসমাস্ক, হ্যান্ড ও ফ্লোর স্যানিটাইজার, থার্মোমিতার ও অক্সিমিটারের বিক্রি বৃদ্ধি পেলেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা আগের মতোই রয়ে গেছে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার নওশীন ফার্মেসির সোহেল আহমেদ বলেন, "গত দুই দিনে আমি ২০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করেছি, অথচ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন ৪ বোতল বিক্রি হতো। ফেসমাস্কের বিক্রিও এখন দ্বিগুণ হয়েছে।"
সোহেল আরও জানালেন যে, বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ পণ্যের যোগান থাকায় দাম বাড়েনি।
ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি, হাসান সরকার জানালেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ডিজিটাল থার্মোমিটার, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ও অক্সিমিটারের প্রচুর অর্ডার পেয়েছেন।
বাজারে পণ্যের যথেষ্ট যোগান রয়েছে এবং আগের দামেই পণ্য বিক্রি করছেন দাবি করে তিনি বলেন, " আজ রোববার (৪ এপ্রিল) আমি ১০০টি ডিজিটাল থার্মোমিটারের অর্ডার পেয়েছি, যেখানে মার্চের দিকে ৫০ পিসের মত বিক্রি করতে পারতাম। মার্চে ৪০টি অক্সিমিটার বিক্রি করেছি, সেই তুলন্যায় ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৮টি বিক্রি করতে পেরেছিলাম।"
তবে কিছু অসাধু বায়বসায়ীদের মধ্যে অক্সিমিটার মজুদ করে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
রাজধানীর শাহবাগের একটি ওষুধের দোকান ঘুরে এই প্রতিনিধি দেখতে পান, দোকানের মালিক তার কর্মচারীদের অক্সিমিটার লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং বলছেন সরকার ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন দেওয়ায় এসবের চাহিদা পরে আরো বাড়বে।
তবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে দোকান মালিক অক্সিমিটার লুকিয়ে ফেলতে বলার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এই প্রতিনিধির কাছে একটি অক্সিমিটার বিক্রি করতে রাজি হন।
এছাড়াও কিছু দোকান মালিক চড়া দামে অক্সিমিটার বিক্রি করছেন। শাহবাগের 'অভিজাত ফার্মেসি'র একজন বিক্রেতা, মোহাম্মদ সোহেল বলেন, "আমরা 'জাম্পার' ব্র্যান্ডের অক্সিমিটার ১৭০০ টাকায় এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডেরগুলো ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করছি।"
যদিও কিছুদিন আগেও জাম্পার অক্সিমিটারের দাম ছিল ১১০০ টাকার কাছাকাছি এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডেরগুলো ছিল ৬০০ টাকা।
মিরপুর সার্কেল ওয়ান এর বাসিন্দা শফিক আহমেদ জানালেন, তিনি এক বোতল অ্যান্টিসেপ্টিক কিনেছেন ২৩০ টাকায়। আধঘন্টা পরে তার প্রতিবেশীর জন্য আরেক বোতল কিনতে গেলে দোকানি তাকে জানিয়ে দেন যে আর অ্যান্টিসেপ্টিক নেই। যদিও তিনি নিজে কেনার সময় অন্তত ৬ বোতল অ্যান্টিসেপ্টিক দোকানে দেখেছিলেন।
এদিকে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট পণ্য মজুদ রয়েছে, তাই দাম বৃদ্ধি পাবার কথা না। তারা ক্রেতাদের আতঙ্কিত হয়ে বেশি বেশি করে পণ্য না কেনার পরামর্শ দেন।
শাহবাগের আজিজ সমবায় মার্কেটের এমএস ট্রেডিং এর প্রোপাইটর গোলাম মোস্তফা জানালেন, দুই সপ্তাহ আগেও এসব পণ্যের স্বল্প চাহিদা থাকায় তাকে লোকসান গুনতে হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, "গতবছরের জুনে আমি ১৪০০ টাকা পিস অক্সিমিটার কিনেছিলাম, কিন্তু সেগুলো সব বিক্রি করতে পারিনি। খুচরা বিক্রেতারা ৬০০ টাকা পিস হিসেবেও এসব পণ্য কিনতে আগ্রহী ছিলেন না। আমি ৮০ টাকা পিস দরে কেএন-৯৫ মাস্কও কিনেছিলাম, কিন্তু তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারিনি।"